নেত্রী স্বমহিমায় আছেন একুশে জুলাইয়ের (21St July) পোস্টারে। কিন্তু দলের সেনাপতিই ভ্যানিশ (21St July)! তার ওপরে সেনাপতি আবার সাময়িক বিশ্রামেও ছিলেন। কিন্তু বিশ্রামে থাকলে পোস্টারে (21St July) থাকা যাবে না, এমন নিয়ম কোথাও তো লেখা নেই! মাসখানেক আগে থেকেই তাই জল্পনার জলঘোলা শুরু হয়েছিল বঙ্গের রাজনৈতিক মহলে।
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরে কালীঘাটে সাংবাদিকদের সামনে শেষবারের মতো পাশাপাশি দেখা গিয়েছিল মমতা-অভিষেককে। যদিও সেদিন কথা বলেছিলেন মমতাই। অভিষেক চুপচাপ শুধুই শ্রোতার ভূমিকায় ছিলেন। যুদ্ধ জয়ের পরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক একটি পোস্ট করেছিলেন নিজের ‘X’ হ্যান্ডেলে। সেখানে তিনি সাময়িক বিশ্রামের ঘোষণা করেন। শারীরিক অসুস্থতা এবং চিকিৎসার জন্যই এই বিশ্রামের ঘোষণা, দাবী ছিল তাঁর। কিন্তু তাতেও বঙ্গের রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জনের ঘনঘটা যেন আরও বেড়ে গিয়েছিল।
২০২৪ এর ব্যাপক সাফল্যের পর একুশে জুলাই শুধুমাত্র আর শহীদ দিবসের সমাবেশে সীমাবদ্ধ নেই। রবিবার কার্যত তৃণমূলের বিজয় সম্মেলন। কিন্তু সেই শহীদ এবং বিজয় সমাবেশে স্বয়ং সেনাপতিই উপস্থিত থাকবেন কি, থাকবেন না? তা নিয়েও বিস্তর ধোঁয়াশা ছিল বঙ্গের রাজনৈতিক মহলে। অবশেষে তৃণমূল সুত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী সেনাপতি দেশে ফিরেছেন। শহীদ সমাবেশের ধর্মতলায় সশরীরে উপস্থিত থাকবেন তিনি, এমনটাই আপাতত খবর।
কিন্তু তবুও পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক ঠেকছে না অনেক দুঁদে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের চোখে এখনও ভাসছে লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশের কথা। তৃণমূলের সেই ব্রিগেডের সমাবেশ বঙ্গ রাজনীতিতে শুধু নয় জাতীয় রাজনীতির মাপকাঠিতেও রীতিমতন আধুনিকত্বের চমকে মোড়ানো ছিল। ব্রিগেডের উন্মুক্ত প্রান্তরের মাঝে তৈরি র্যাম্প, দলের ৪২ জন প্রার্থীকে নিয়ে মমতা ব্যানার্জি সেই র্যাম্পের উপর র্যাম্পওয়াক। তৃণমূল অন্তরের খবর অভিষেক ব্যানার্জির মস্তিষ্কপ্রসূত এই সমস্ত চমক জাতীয় রাজনীতিতেও শোরগোল ফেলে দিয়েছিল।
TMC 21 July: ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ পরিদর্শনে মমতা, চায়ে চুমুক দিতে দিতে শুনলেন খুঁটিনাটি
মাঝে তফাৎ মাত্র কয়েক মাসের। আবারও তৃণমূলের মেগা শো। সেদিন ব্রিগেডে আগের দিন বিকেলে রীতিমতো দক্ষ ম্যানেজমেন্ট অফিসারের ভূমিকা দেখা গিয়েছিল অভিষেক ব্যানার্জিকে। চৈত্রের গরম বিকেলের পড়ন্ত রোদে প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে পরিদর্শন করেছিলেন গোটা সমাবেশের মঞ্চ। নিজে হেঁটে, লাফিয়ে রীতিমতো পরীক্ষা করে দেখেছিলেন সবকিছু। পরের দিনের প্র্যাক্টিসটা যেন আগের বিকেলেই করে নিয়েছিলেন অভিষেক।
একুশে জুলাইয়ের আগের দিন অভিষেকহীন বিকেলে সেই দায়িত্ব যেন নিলেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের ছোট বড় অনেক নেতাই ধর্মতলার সভামঞ্চের আশেপাশে হাজির হয়েছিলেন বিকেল থেকেই। কিন্তু যাকে নিয়ে এত গুঞ্জন,তাঁর দেখা নেই। দলনেত্রী এলেন, কিন্তু সেনাপতি শহরে ফিরেও আড়ালেই থেকে গেলেন। এই বিষয়টাকে যেন এড়িয়ে যেতে পারছেন না অনেক বিশেষজ্ঞই।
২১শে জুলাইয়ের পোস্টারের বিষয়টিও চোখে পড়ার মতো। লোকসভা ভোটে ‘জনগণের গর্জন,বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন ‘ স্লোগান দেওয়া পোস্টারে ছিলেন মমতা অভিষেক দুজনই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিছনেই দৃঢ় মুষ্টিবদ্ধ হাত তোলা অভিষেকের প্রত্যয়ী সেই ছবি যেন বঙ্গের রাজনীতির একটা আইকনিক সিম্বলে পরিণত হয়েছিল।
২১ জুলাইয়ের আগে বিরাট বার্তা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতার
কিন্তু সেই লোকসভা মেটার এক মাসের মধ্যেই কোন কারণে তৃণমূলের পোস্টার থেকে অভিষেক বাদ? সেই রহস্য স্বয়ং ব্যোমকেশ বা ফেলুদাও ভেদ করতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। এর আগেও একুশে জুলাইয়ের পোস্টারে একা ছিলেন মমতা। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আলাদা। যুবরাজ অভিষেক এখন যেন ধীরে ধীরে সম্রাট হওয়ার পথে এগোচ্ছেন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তাঁর ছবি ভ্যানিশ হয়ে যাওয়াটা সবারই চোখে লাগছে।
তৃণমূলের প্রাক্তন মুখপাত্র এবং রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের মুখে একটা পেটেন্ট কথা শোনা যায়। ‘মমতা ব্যানার্জি নেতৃত্বে এবং অভিষেক ব্যানার্জির সেনাপতিত্বে’! কুণালের নেত্রী রয়েছেন পোস্টার আলো করে, কিন্তু সেনাপতির কি হলো? বঙ্গের বিরোধী দল বিজেপির এখন গৃহদাহ অবস্থা। কিন্তু গৃহদাহের ছাইচাপা আঁচ কী শাসক শিবিরের অভ্যন্তরেও পাওয়া যাচ্ছে?
একুশে জুলাইয়ের রাজনৈতিক মঞ্চে অভিষেকের উপস্থিতি এবং বক্তব্যই অনেক রহস্যের সমাধান করে দেবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আপাতত রাত পোহালে সেই মাহেন্দ্রক্ষনের দিকেই তাকিয়ে তৃণমূল সমর্থক থেকে শুরু করে রাজ্যের রাজনীতির কারবারিরা।