কলকাতা: প্রতিদিন অফিস টাইমে মেট্রো (Kolkata Metro) ধরতে নেমে পড়ছেন হাজার হাজার যাত্রী। কিন্তু সেই মেট্রো যদি বারবার দেরি করে আসে, তাহলে ভোগান্তির শেষ থাকে না। সম্প্রতি কলকাতা মেট্রো রেলের দেরির আসল কারণ খুঁজে দিল মেট্রো ইউনিয়ন। জানা গেল, সমস্যার মূলে রয়েছে জনবল ঘাটতি এবং সঠিক সময়ে কর্মী নিয়োগ না হওয়ার জটিলতা।
সূত্র অনুযায়ী, ব্লু লাইনে মেট্রোর প্রতিটি রেক চালাতে মোটরম্যান ও গার্ড থাকেন। আগে লোকো পাইলট দুই প্রান্ত থেকেই ট্রেন চালাতে পারতেন। ফলে রেক ঘোরানোর সময়ে এতটা সময় লাগত না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্যরকম। বর্তমানে যিনি গার্ড হিসেবে থাকেন, তিনি সহকারী লোকো পাইলট হলেও সুড়ঙ্গের ভিতরে ট্রেন চালান না। তাই উল্টোদিকে যাওয়ার সময় লোকো পাইলটকে ট্রেনের অপর প্রান্তে গিয়ে দায়িত্ব নিতে হয়। এক কথায়, একজন লোকো পাইলটকেই উভয় দিকে মেট্রো চালাতে হচ্ছে। এর ফলেই প্রতিটি রেক ঘোরানোর সময় বেড়ে যাচ্ছে এবং মেট্রো হচ্ছে দেরি।
সংখ্যার দিক থেকে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। বর্তমানে প্রায় ২৪৭ জন মোটরম্যানের পদ ফাঁকা রয়েছে। শুধুমাত্র ব্লু লাইনেই প্রয়োজন ১০৪ জন ট্র্যাক ম্যান, অথচ রয়েছে মাত্র ৮৪ জন। এঁদের দিয়েই সমস্ত লাইন সামলাতে হচ্ছে। পাশাপাশি অত্যাবশ্যকীয় অপারেটিং স্টাফ দরকার ১৪০০ জন, কিন্তু হাতে আছে মাত্র ৭৫০ জন কর্মী। এই বিপুল জনবল ঘাটতি কাটানোর কোনও উদ্যোগ গত এক দশকে নেওয়া হয়নি।
মেট্রো রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুজিত ঘোষ জানিয়েছেন, “২০১২ সালের পর থেকে সরাসরি মেট্রো রেলে মোটরম্যান নিয়োগ হয়নি। আমরা নির্ভর করে আছি পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব রেল থেকে আসা লোকো পাইলটদের ওপর। কিন্তু যাঁদের পাঠানো হচ্ছে, তাঁরা অনেকেই মেট্রো চালানোর অভিজ্ঞতায় দক্ষ নন। ফলে সমস্যা বাড়ছেই।”
অন্যদিকে প্রগতিশীল কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস সেনগুপ্তের বক্তব্য, “এত নতুন লাইন চালু হয়েছে, যাত্রীদের সুবিধার জন্য এগুলো অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু সেই সংখ্যক নতুন কর্মী নিয়োগ হয়নি। যারা আছেন তাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলা হচ্ছে। ফলে মেট্রো কার্যত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।”
অফিস টাইমে প্রতিদিন মেট্রো ধরার জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের অতিষ্ঠ হতে হচ্ছে। ট্রেন লেটের কারণে কেউ অফিসে দেরি করছেন, কেউ আবার স্কুল-কলেজের পরীক্ষা বা ক্লাস মিস করছেন। পরিস্থিতি নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ চরমে উঠেছে।
সমাধানের উপায়ও জানিয়েছে ইউনিয়ন। তাঁদের মতে, দ্রুত সরাসরি মোটরম্যান নিয়োগ করতে হবে এবং ট্র্যাক ম্যানসহ অপারেটিং স্টাফদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। না হলে নতুন লাইনের সম্প্রসারণ হলেও যাত্রীদের ভোগান্তি থামবে না।
তবে এই প্রসঙ্গে মেট্রো কর্তৃপক্ষ নীরব। সরকারি কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে— যতদিন না নিয়োগ হচ্ছে, ততদিন কি এই সমস্যাই সহ্য করতে হবে যাত্রীদের?