চমকের নামে ছাই! দিলীপের বোমা মন্তব্যে বিরোধী কটাক্ষ

গত কয়েকদিন ধরেই রাজ্য রাজনীতির আঙিনায় চমকপ্রদ উত্তেজনা। সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। তিনি আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন—২১ জুলাই ‘চমক’ আসতে চলেছে। এই ঘোষণার…

Dilip Ghosh going to delhi

গত কয়েকদিন ধরেই রাজ্য রাজনীতির আঙিনায় চমকপ্রদ উত্তেজনা। সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। তিনি আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন—২১ জুলাই ‘চমক’ আসতে চলেছে। এই ঘোষণার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে নানা রকম জল্পনা তৈরি হয়। অনেকে ভাবতে শুরু করেন, তিনি হয়তো দলবদল করতে চলেছেন, কিংবা বড় কোনও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন। কেউ কেউ আবার ভেবেছিলেন হয়তো বিজেপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছেন দিলীপ। তবে কী সেই চমক—তা তিনি মুখ ফুটে কিছুতেই বলেননি। শুধু জানিয়েছিলেন, সময় এলেই সব বোঝা যাবে।

অবশেষে ২১ জুলাই এল। তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবস পালনের পাশাপাশি বিজেপির তরফে শহিদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে কলকাতার ধর্মতলার কাছাকাছি সভার আয়োজন করা হয়। সেই সভার মঞ্চেই উপস্থিত হন দিলীপ ঘোষ। তিনি বক্তব্যও রাখেন। আর এটিই ছিল তাঁর প্রতীক্ষিত ‘চমক’। যদিও, অনেকের কাছেই বিষয়টি অতটা তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে সাধারণ মানুষের একাংশ পর্যন্ত প্রশ্ন তুলেছেন—এটাই কি তবে দিলীপ ঘোষের সেই বহু চর্চিত চমক?

   

তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা কটাক্ষ করে বলেন, “প্রত্যাশা ছিল পরমাণু বোমার, কিন্তু ফাটল কালী পটকা।” তাঁর কথায়, “যে হারে চমকের ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছিল, তাতে মনে হচ্ছিল রাজ্য রাজনীতিতে ভূমিকম্প হবে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হল না। দিলীপবাবু বরাবরের মতো মঞ্চে উঠলেন, কথা বললেন, আর নেমে এলেন।”

বাম শিবির থেকেও এসেছে কটাক্ষ। তাদের বক্তব্য, “বিজেপির অভ্যন্তরেই এখন বিভ্রান্তি ছড়াতে ব্যস্ত কিছু নেতা। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই এ ধরনের ‘ড্রামা’ করতে হচ্ছে।”

এদিকে দিলীপ ঘোষ তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট জানান, “আমি বিজেপির সৈনিক, রাজনীতির ময়দানে থাকব। যাঁরা আমাকে নিয়ে কুৎসা রটাচ্ছেন, তাঁরা রাজনৈতিক হীনমন্যতায় ভুগছেন।”

Advertisements

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, দিলীপ ঘোষ বর্তমানে রাজ্য বিজেপিতে কোণঠাসা অবস্থানে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছেও তাঁর গুরুত্ব আগের মতো নেই বলেই শোনা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষা এবং মিডিয়া কভারেজ পাওয়ার জন্যই তিনি এই ‘চমক’ নাটক সাজান বলেই অনুমান।

তবে দিলীপের সমর্থকদের মতে, তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গেল যে তিনি দল ছাড়ছেন না, বরং বিজেপিতেই থেকে লড়াই চালিয়ে যাবেন। অনেকের মতে, এই ঘোষণাই তাঁর কাছে বড় চমক। কারণ কিছুদিন ধরেই তাঁর দলত্যাগ নিয়ে জল্পনা চলছিল।

এই ঘটনার পর রাজনৈতিক মহলে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে—বাংলার রাজনীতিতে ব্যক্তিকেন্দ্রিক চমকের রাজনীতি কতটা কার্যকর? দিলীপ ঘোষের ‘চমক’ যেমন একদিনেই ভোঁতা হয়ে গেল, তেমনি ভবিষ্যতে এই ধরনের পদক্ষেপে রাজনীতির ধারাকে কতটা প্রভাবিত করা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।