কলকাতায় মেঘলা আকাশের সঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা, ২৮ জুলাই ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গে আজ রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, আবহাওয়া (West Bengal Weather) বেশ অস্থির থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ…

West Bengal Weather Forecast for July 28, 2025: Heavy Rain and Thunderstorms Expected in Kolkata and Beyond

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা, ২৮ জুলাই ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গে আজ রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, আবহাওয়া (West Bengal Weather) বেশ অস্থির থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (IMD)। কলকাতা সহ রাজ্যের একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টি, বজ্রপাত এবং ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি নিম্নচাপ এবং পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে এর প্রভাবে আজ আবহাওয়া উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হবে। কলকাতায় তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলেও, উচ্চ আর্দ্রতা এবং বৃষ্টির কারণে গরম ও আর্দ্র পরিবেশ অনুভূত হবে।

কলকাতার আবহাওয়ার বিস্তারিত
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের (IMD) তথ্য অনুযায়ী, কলকাতায় আজ সকাল থেকে মেঘলা আকাশের সঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দুপুরের দিকে বৃষ্টির তীব্রতা বাড়তে পারে, এবং বিকেলে কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (ন্যূনতম) থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস (সর্বোচ্চ) এর মধ্যে থাকবে। আর্দ্রতার মাত্রা ৯৪% থেকে ১০০% পর্যন্ত হতে পারে, যা পরিবেশকে আরও অস্বস্তিকর করে তুলবে। বাতাসের গতি ৯.৪ থেকে ১২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা হতে পারে, এবং কিছু সময়ে ৩০-৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।

   

কলকাতায় বায়ুর গুণমান (Air Quality Index – AQI) মাঝারি স্তরে থাকবে, যেখানে PM2.5 এবং PM10-এর মাত্রা যথাক্রমে ১৮ এবং ৪০ হতে পারে। তবে, দীর্ঘক্ষণ বাইরে থাকলে সংবেদনশীল গোষ্ঠী, যেমন শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা, শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। বৃষ্টির পরিমাণ ০.১৮ মিলিমিটার থেকে বেশি হতে পারে, এবং দৃশ্যমানতা ৩.২ কিলোমিটারের কাছাকাছি থাকবে, যা ঘন মেঘ এবং বৃষ্টির কারণে কমে যেতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলার আবহাওয়া
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ উভয় অংশে আজ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আলিপুরদুয়ার, বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূম, কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর, দার্জিলিং, হুগলি, হাওড়া, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা সহ একাধিক জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি এবং বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে, যেমন দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর, ৫০-৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।

উত্তরবঙ্গে, বিশেষ করে দার্জিলিং এবং কালিম্পংয়ে, অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যা পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। দক্ষিণবঙ্গে কলকাতা, হাওড়া, এবং হুগলিতে শহুরে বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলগুলোতে। আইএমডি-র পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই নিম্নচাপটি পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় অঞ্চলের উপর দিয়ে পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যার কারণে বৃষ্টির তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।

সতর্কতা ও প্রস্তুতি
আবহাওয়া বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসন জনসাধারণের জন্য বেশ কিছু সতর্কতা জারি করেছে। কলকাতা এবং উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের ঘরের বাইরে বের হওয়ার সময় জলরোধী পোশাক এবং ছাতা ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বজ্রপাতের সম্ভাবনার কারণে গাছের নীচে বা উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। শহরের নিম্নাঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি থাকায় বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

Advertisements

কৃষকদের জন্যও বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ধান ও শাকসবজির ক্ষেতে জল জমে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। তাই কৃষকদের নিকাশি ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকার জেলেদের সমুদ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে, কারণ ঝোড়ো হাওয়া এবং উচ্চ ঢেউয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

সমাজে প্রভাব
ভারী বৃষ্টি এবং ঝড়ের কারণে কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলায় দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হতে পারে। শহরে যানজট, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা এবং রাস্তায় জল জমার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে, কলকাতার মতো শহরে, যেখানে নিকাশি ব্যবস্থা প্রায়ই অপ্রতুল হয়, ভারী বৃষ্টি শহুরে বন্যার কারণ হতে পারে। স্কুল, কলেজ এবং অফিসগুলোতে আজ সতর্কতা জারি থাকতে পারে, এবং অনেকে বাড়ি থেকে কাজ করার পরামর্শ পেতে পারেন।

এক্স-এ পোস্ট করা তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় বাসিন্দারা এই আবহাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকে ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে বৃষ্টি এবং ঝড়ের কারণে সৃষ্ট অসুবিধার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে, কিছু বাসিন্দা এই বৃষ্টিকে গরম থেকে স্বস্তি হিসেবে দেখছেন, যদিও ঝড় এবং বজ্রপাতের ঝুঁকি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
জুলাই মাসে পশ্চিমবঙ্গে গড়ে ১৫ থেকে ২২ দিন বৃষ্টি হয়, এবং এই বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে নিম্নচাপের কারণে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হতে পারে। আইএমডি-র তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে গড়ে ১৬৮.৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়, তবে এই সপ্তাহে এটি আরও বেশি হতে পারে। এই ভারী বৃষ্টি কৃষি, পরিবহন এবং শহুরে অবকাঠামোর উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।

২৮ জুলাই ২০২৫-এ পশ্চিমবঙ্গ এবং কলকাতায় ভারী বৃষ্টি, বজ্রপাত এবং ঝোড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। কলকাতায় তাপমাত্রা ২৭-৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলেও, উচ্চ আর্দ্রতা এবং বৃষ্টির কারণে অস্বস্তিকর পরিবেশ থাকবে। উত্তরবঙ্গে ভূমিধস এবং দক্ষিণবঙ্গে শহুরে বন্যার ঝুঁকি রয়েছে। বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে এবং প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আবহাওয়া বিভাগের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসরণ করে সকলকে নিরাপদে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।