পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া (West Bengal Weather) প্রায়শই তার অনির্দেশ্যতার জন্য পরিচিত, এবং ২০২৫ সালের জুলাই মাসও এর ব্যতিক্রম নয়। আলিপুর আবহাওয়া দফতর এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষ করে কলকাতায় ভারী বৃষ্টি এবং বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপের অঞ্চল তৈরি হওয়ার কারণে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে তীব্র বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে, যা সাধারণ জনজীবন এবং কৃষি কার্যক্রমের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
কলকাতার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, কলকাতায় ২৪ জুলাই সকালে আংশিক মেঘলা আকাশ থাকবে, তবে দুপুরের পর থেকে মেঘের পরিমাণ বাড়বে এবং বিকেলে কিছু এলাকায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২-৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৬-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে। আর্দ্রতার মাত্রা ৮৫-৯০% থাকবে, যা আবহাওয়াকে গরম এবং আর্দ্র করে তুলবে। বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৭-১০ কিলোমিটার হবে, যা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হবে। বৃষ্টির সম্ভাবনা ৬০-৭০% এর মধ্যে থাকবে, এবং কিছু এলাকায় ১০-১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে।
এক্স প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত পোস্ট অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে কলকাতা এবং দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই নিম্নচাপটি বৃহস্পতিবার থেকে শক্তি সঞ্চয় করবে এবং শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির কারণ হতে পারে। ফলে, কলকাতার বাসিন্দাদের বৃষ্টির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, বিশেষ করে যারা বাইরে কাজ করেন বা ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন।
দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলায় আবহাওয়া
দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি, যেমন হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, এবং নদিয়ায় বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, কিছু এলাকায় ২০-৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে, এবং বজ্রপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে। এই জেলাগুলিতে বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১০-১৫ কিলোমিটার হতে পারে, যা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে মিলিত হলে কিছু এলাকায় গাছ পড়ে যাওয়া বা বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া
উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি, যেমন দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, এবং কোচবিহারে, বৃহস্পতিবার মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮-৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২২-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে। বৃষ্টির পরিমাণ ১৫-২৫ মিলিমিটার হতে পারে, এবং কিছু পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা থাকতে পারে। উত্তরবঙ্গের কৃষকদের জন্য এই বৃষ্টি ফসলের জন্য উপকারী হলেও, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বন্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সম্ভাব্য প্রভাব
ভারী বৃষ্টির কারণে কলকাতা এবং দক্ষিণবঙ্গের নিম্নাঞ্চলে জল জমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতার রাস্তাঘাটে ট্রাফিক সমস্যা বাড়তে পারে, বিশেষ করে নিম্নাঞ্চল যেমন বেলেঘাটা, মানিকতলা, এবং ইএম বাইপাসের আশেপাশে। বজ্রপাতের ঝুঁকি থাকায় বাইরে থাকা ব্যক্তিদের সতর্ক থাকতে হবে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পরামর্শ অনুযায়ী, বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা এড়িয়ে চলা এবং গাছের নীচে আশ্রয় না নেওয়া উচিত।
কৃষি ক্ষেত্রে এই বৃষ্টি ধান, পাট এবং সবজি চাষের জন্য উপকারী হতে পারে, তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ফসলের ক্ষতি করতে পারে। কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে তারা তাদের ফসলের জন্য সঠিক নিকাশি ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। এছাড়া, মৎস্যজীবীদের বঙ্গোপসাগরে না যাওয়ার জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে, কারণ সমুদ্র উত্তাল থাকতে পারে।
সতর্কতা ও প্রস্তুতি
১. বৃষ্টির জন্য প্রস্তুতি: কলকাতা এবং দক্ষিণবঙ্গের বাসিন্দাদের ছাতা, রেইনকোট এবং জলরোধী জুতো ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বাড়ির নিকাশি ব্যবস্থা পরীক্ষা করে দেখুন যাতে জল জমে না।
২. ট্রাফিক সতর্কতা: ভারী বৃষ্টির কারণে কলকাতার রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম হতে পারে। ভ্রমণের পরিকল্পনা করার সময় অতিরিক্ত সময় রাখুন।
৩. বিদ্যুৎ সুরক্ষা: বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখুন এবং খোলা জায়গায় ফোন ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
৪. জরুরি সেবা: কলকাতা পৌরসভা এবং জেলা প্রশাসন জল নিষ্কাশন এবং জরুরি পরিষেবার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে স্থানীয় হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন।
সরকারি উদ্যোগ
পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং আলিপুর আবহাওয়া দফতর ভারী বৃষ্টির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কলকাতা পৌরসভা নিম্নাঞ্চলের পাম্পিং স্টেশনগুলি সক্রিয় করেছে এবং জল নিষ্কাশনের জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে ভূমিধসের ঝুঁকি থাকায় পাহাড়ি এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা জনগণকে আবহাওয়ার আপডেট নিয়মিত অনুসরণ করতে এবং সতর্ক থাকতে বলেছেন।
আজ পশ্চিমবঙ্গ ও কলকাতায় ভারী বৃষ্টি এবং বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, যা নিম্নচাপের কারণে আরও তীব্র হতে পারে। কলকাতার বাসিন্দাদের এবং দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির জনগণকে এই আবহাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সঠিক সতর্কতা এবং প্রস্তুতির মাধ্যমে আমরা এই প্রাকৃতিক ঘটনার প্রভাব কমাতে পারি।