কথায় বলে ঠেলায় না পড়লে বাঘ কখনও গাছে ওঠে না (Firhad Hakim)। বিশেষজ্ঞদের মতে কার্যত সেই দৃশ্যই দেখা গেল বিধানসভার অন্দরে (Firhad Hakim)। বিধানসভার বাইরে করা মন্তব্যকে নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদকে (Firhad Hakim) তার বক্তব্য পেশ করার নির্দেশ দিলেন স্পিকার। প্রকারান্তরে যা রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপির দাবি মেনে নেওয়া বলেই মনে করা হচ্ছে।
সপ্তাহখানেক আগেই অল ইন্ডিয়া কোরান কম্পিটিশনে গিয়ে ইসলাম নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন ফিরহাদ হাকিম। সেই মন্তব্য হিন্দু তথা অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করেছে, দাবি তোলে বিজেপি। এ নিয়ে জায়গায় জায়গায় প্রতিবাদও হয়। এমনকী বিধানসভাতে মিছিল করে রাজ্যের পুর এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রীকে বয়কট করার ঘোষণাও করেন শুভেন্দুরা।
এবার সেই ঘটনায় দেখা গেল বেনজির দৃশ্য। বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ফিরহাদকে এই বিষয়ে বিবৃতি দেওয়ার নির্দেশ দেন। যদিও এই নির্দেশ দেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা রাজ্যের শাসক দল বা স্পিকার কারোরই ছিল না। তা সত্ত্বেও বিধানসভায় দাঁড়িয়ে স্পিকারের নির্দেশে ফিরহাদ তাঁর বক্তব্য পেশ করেন।
Rahul Gandhi: ‘পাপ্পুর’ করা সেলাইয়ে ‘হাওয়াই চটি’র দাম এখন ১০ লাখ!
ববি তার বক্তব্যে শুভেন্দুদের পাল্টা প্রশ্ন করে জিজ্ঞাসা করেন যে তাঁদের তাঁকে ধর্মনিরপেক্ষ মনে হয় কিনা? তিনি নিজে যে চেতলা অগ্রণী ক্লাবের দুর্গাপুজো এবং কালীপুজোর প্রধান উদ্যোক্তা এবং পৃষ্ঠপোষক, সে কথাও মনে করিয়ে দেন ফিরহাদ। তার পরিষ্কার বক্তব্য তিনি স্বজ্ঞানে বা অজ্ঞানে কখনওই কোনও ধর্মকে অপমান করেন না।
প্রত্যুত্তরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন যে, তাঁরাও সনাতন হিন্দু ধর্ম নিয়ে কথা বলেন। নিজের ধর্ম নিয়ে কথা বলাটা অন্যায় নয়। কিন্তু অন্যের ধর্মকে কোনওভাবেই আঘাত করা উচিত না। শুভেন্দু এও বলেন যে ফিরহাদকে তাঁরা ক্ষমা চাইতে বলছেন না। শুধু রাজ্যের মন্ত্রী তাঁর নিজের বক্তব্যে দুঃখিত কিনা সেটা বলুন।
পরবর্তীকালে ফিরহাদের দুঃখ প্রকাশে গোটা ব্যাপারটির আপাতত মিটমাট সম্ভব হয়েছে। বিজেপির সূত্রে ফিরহাদের উপর থেকে বয়কট প্রস্তাবও ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গোটা ঘটনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এই বিষয়ে তাঁরা অবশ্য দ্বিধাবিভক্ত। একদল বিশেষজ্ঞের মতে হিন্দু ভোটের অঙ্কেই শাসকের এই পদক্ষেপ। আরেক দল বিশেষজ্ঞের মতে দিল্লির সংসদীয় রাজনীতিতে বিরোধী স্বরের দাবিকে জোরদার করার জন্যই বিধানসভায় এই চাল খেললেন মমতারা।
২৬-এর বিধানসভায় নিজেদের প্রাপ্ত ৩৯ শতাংশ হিন্দু ভোটকে ৪২ থেকে ৪৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি। ফিরহাদের বক্তব্যকে চরম হিন্দু বিরোধী বলে অলআউট অ্যাটাকে নেমেছিল রাজ্যের বিরোধী দল। বিধানসভার অভ্যন্তরে সেই আক্রমণের ধারই ভোতা করার চেষ্টা করলেন অধ্যক্ষ? সমস্যার মিটমাট হয়ে যাওয়ায় আপাতত এই ইস্যু ধামাচাপা পড়ে গেল। যাকে প্রকারান্তরে তৃণমূলের কার্যসিদ্ধি বলেই মানছেন অনেকে। এমনকি বিজেপির নেতারাও প্রস্তুত ছিলেন না যে, অধ্যক্ষ তাঁদের এই দাবি মেনে নেবেন।
শালবনী ইস্পাত কারখানা নিয়ে জারি জট জটিলতা, আদালতের কাঠগড়ায় সৌরভ গাঙ্গুলি?
অপরদিকে রাজ্যে বিরোধীদল বিজেপি হলেও, বিধানসভায় সংখ্যা নিরিখে তারা শাসকের তুলনায় বহু যোজন পিছিয়ে। তা সত্ত্বেও বিজেপির দাবি কে মান্যতা দেওয়া আসলে ঘুরিয়ে বিজেপিকে আয়না দেখানো। এমনটাই দাবি অনেক বিশেষজ্ঞের। কেন্দ্রের শাসক বিজেপির বিরুদ্ধে বারংবার বিরোধীদের কণ্ঠরোধের অভিযোগ ওঠে। সেখানে রাজ্যের শাসক তৃণমূলের এই পদক্ষেপ কার্যত দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলেই মত অনেকের। তাহলে কী কলকাতার রাজনীতির চালে দিল্লিকে মাত দেওয়াই লক্ষ্য তৃণমূলের?
লক্ষ্য যাই হোক না কেন, আপাতত লক্ষ্যভেদ করতে পেরেছে তৃণমূল। এটা মানছেন সকলেই। বিধানসভায় যে বেনজির পদক্ষেপ দেখা গেল, তা শাসক বা বিরোধী সব মহলেই প্রশংসা কুড়িয়েছে। আগামী দিনে অন্যান্য ইসুতেও কী এই একই মানসিকতা দেখাবে শাসক? নাকি শুধু ধর্মের অঙ্কের হিসেবে বিনয়ের অবতার হলেন অধ্যক্ষ? আগামী দিনের বিধানসভার অধিবেশনেই সেই উত্তর পাওয়া যাবে।