স্বাস্থ্য পরিষেবায় শীর্ষে বাংলা

কলকাতা, ১৮ অক্টোবর ২০২৪: স্বাস্থ্য পরিষেবায় নতুন এক মাইলফলক স্থাপন করেছে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal Healthcare)। ভারতের জাতীয় মান যাচাই (NQAS) অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ এখন দেশের সবচেয়ে…

mamata banerjee

কলকাতা, ১৮ অক্টোবর ২০২৪: স্বাস্থ্য পরিষেবায় নতুন এক মাইলফলক স্থাপন করেছে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal Healthcare)। ভারতের জাতীয় মান যাচাই (NQAS) অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ এখন দেশের সবচেয়ে বেশি গুণমান-প্রমাণিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধিকারী রাজ্য হিসেবে উঠে এসেছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যখাতে এই উন্নতি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার প্রতিফলন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

NQAS (National Quality Assurance Standards)-এর তালিকা অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন রাজ্যকে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ও পরিষেবার মানের ভিত্তিতে র‍্যাংকিং করা হয়। সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, মেডিকেল কলেজ বাদ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ১২,৮৫৯ টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে ৩,০৩৯টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র NQAS দ্বারা মান-প্রমাণিত হয়েছে, যা মোট কেন্দ্রগুলির প্রায় ২৩.৬৩%। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ শীর্ষস্থান অর্জন করেছে, যা দেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে একটি বড়ো সাফল্য।

   

গুণমান-প্রমাণিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা ও অন্যান্য রাজ্যের তুলনা
ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলির মধ্যে অনেকেই স্বাস্থ্য পরিষেবায় উন্নতি করেছে, তবে পশ্চিমবঙ্গ এই ক্ষেত্রে অন্যান্য রাজ্যগুলিকে পিছনে ফেলেছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দমন ও দিউ এবং দাদরা ও নগর হাভেলি, যেখানে ১০১ টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে ৯১ টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র মান-প্রমাণিত হয়েছে, যা ৯০.১০%। তৃতীয় স্থানে থাকা পশ্চিমবঙ্গের পরে অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং গুজরাটের মতো রাজ্যগুলি রয়েছে, যেখানে গুণমান-প্রমাণিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হার তুলনামূলকভাবে কম। অন্ধ্রপ্রদেশে মোট ১১,৯৫৯ টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে ২,১৭২ টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র মান-প্রমাণিত হয়েছে, যা প্রায় ১৮.১৬%।

এর পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশে ১১,৭৫৪ টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে ১,৯৫২ টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র NQAS দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে, যা মোট কেন্দ্রগুলির ১৬.৬১%। গুজরাটে ৯৯১০ টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে ১,৫৪১টি কেন্দ্র মান-প্রমাণিত হয়েছে, যা ১৫.৫৫%। তেলেঙ্গানায় এই হার ১৪.৮৪% এবং তামিলনাড়ুতে ১২.১৬%।

স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নে রাজ্যের প্রচেষ্টা
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাম্প্রতিক বছরগুলিতে স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়নের লক্ষ্যে নেওয়া নীতি এবং কর্মসূচি রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার মানকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। ‘স্বাস্থ্য সাথী’ প্রকল্প থেকে শুরু করে নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, আধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজন এবং আরও ভালো সেবা প্রদানের জন্য হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়ন— সবকিছুই এই সাফল্যের মূল কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবার মানোন্নয়নের পাশাপাশি তা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মান-প্রমাণিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিষেবার গুণমান বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবায় উন্নতির প্রভাব
গ্রামীণ এলাকাগুলিতে মান-প্রমাণিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সেসব অঞ্চলের মানুষ ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে আরও সহজলভ্য সুবিধা পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মান-প্রমাণিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে পরিষেবার মান আরও উন্নত হওয়ায়, সাধারণ মানুষ সেখানে সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির পরিকাঠামোগত উন্নতি এবং প্রশিক্ষিত কর্মীদের উপস্থিতি আরও ভালো পরিষেবা প্রদানে সহায়ক হচ্ছে।

এছাড়াও, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে উন্নত মানের ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, এবং পরিষেবার নিরবচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করা হয়েছে, যা গ্রামীণ অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির মানোন্নয়নে ভবিষ্যত পরিকল্পনা
পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানিয়েছে, স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতিতে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে NQAS সার্টিফিকেশন পাওয়ার পর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির মান ধরে রাখার বিষয়েও রাজ্য সরকার নজরদারি করবে। আরও নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন এবং ইতিমধ্যেই প্রমাণিত কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হবে।

স্বাস্থ্যখাতে কর্মী নিয়োগের পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণ, আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবহার এবং উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয় করে ভবিষ্যতে আরও ভালো পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও, রাজ্য সরকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে রোগীদের চাহিদা মেটানোর জন্য নতুন নীতি গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিষেবার এই সাফল্য দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। রাজ্যের সরকার এবং স্বাস্থ্যবিভাগের প্রচেষ্টায় সাধারণ মানুষকে উন্নত মানের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হয়েছে, যা ভবিষ্যতে রাজ্যের স্বাস্থ্যখাতকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।