চাকরি রক্ষার শেষ চেষ্টায় বিকাশরঞ্জন শরণে চাকরিহারা কর্মীরা

West Bengal SSC controversy: পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ক্ষেত্রে চলমান বিতর্ক ও সংকটের কেন্দ্রে বর্তমানে রয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী, যাঁরা সম্প্রতি শীর্ষ আদালতের…

Bengal teacher recruitment scam

West Bengal SSC controversy: পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ক্ষেত্রে চলমান বিতর্ক ও সংকটের কেন্দ্রে বর্তমানে রয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী, যাঁরা সম্প্রতি শীর্ষ আদালতের রায়ের ফলে তাঁদের চাকরি হারিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, এই সকল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে এবং সেকারণেই নিয়োগ বাতিল হয়েছে। ফলে ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ‘যোগ্য’ বলে বিবেচিত প্রার্থীরা কাজ চালিয়ে যেতে পারলেও, তারপর কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তা তুঙ্গে।

এই অনিশ্চয়তার মাঝে চাকরিহারা প্রার্থীদের একাংশ আইনি পরামর্শ নিতে গিয়েছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের কাছে। বর্ষীয়ান এই আইনজীবী তাঁদের সামনে এক নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। তাঁর কথায়, “ওদের ভুল বোঝানো হয়েছিল। আইনত এভাবে ওদের কাজে ফেরানো সম্ভব নয় কোনওভাবেই।” তিনি জানান, শীর্ষ আদালতের রায়ের পর পূর্বের নিয়োগ বাতিল হয়ে গেছে, এবং তাই আগের পদে পুনর্বহাল হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। নতুন করে চাকরি পেতে হলে সকলকেই ফের পরীক্ষা দিতে হবে, এটাই একমাত্র আইনসম্মত পথ।

   

বিকাশরঞ্জনের এই বক্তব্যে প্রাথমিকভাবে অনেক চাকরিহারাই হতাশ হলেও, তাঁরা হাল ছাড়ছেন না। বরং আন্দোলনের পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছি। তিনি বলেছেন, আমাদের পাশে থাকবেন। এবার চাই, যাঁরা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত তাঁদের নাম প্রকাশ্যে আসুক। আমরা চাই, প্রকৃত অপরাধীরা যেন চিহ্নিত হন ও তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

চাকরি হারানোদের একটি বড় অংশের দাবি, তাঁরা কোনও দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন না। অনেকেই পরীক্ষায় ভালো ফল করে, যোগ্যতার ভিত্তিতেই চাকরি পেয়েছিলেন। সেইসব প্রার্থীরা এখন চরম মানসিক, সামাজিক ও আর্থিক চাপে রয়েছেন। কেউ কেউ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন, আবার কেউ বা ঋণের বোঝায় জর্জরিত। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প কোন পথ রয়েছে কি না, তা খুঁজতেই তাঁরা বিকাশরঞ্জনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।

Advertisements

আইনজীবী তাঁদের পরামর্শ দিয়েছেন, নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি নিতে এবং আইনি পথে কোনও স্বচ্ছ ও বাস্তবসম্মত দাবি থাকলে তা আদালতের সামনে পেশ করতে। তবে তিনি এই কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যাঁরা অযোগ্য হয়েও চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের কোনওভাবেই বাঁচানো সম্ভব নয়।

চাকরিহারাদের মধ্যে এখন একদিকে যেমন নতুন করে পরীক্ষার প্রস্তুতির ভাবনা চলছে, তেমনই চলছে প্রতিবাদ ও জনমত গড়ার প্রস্তুতিও। তাঁরা মনে করছেন, এই লড়াই শুধুমাত্র চাকরির জন্য নয়, বরং ন্যায় ও স্বচ্ছতার পক্ষে। তাঁদের চাওয়া, রাজ্য সরকার যেন প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়, এবং নির্দোষ প্রার্থীদের পাশে দাঁড়ায়।

শেষমেশ, পুরো বিষয়টি দাঁড়িয়ে আছে একটি মৌলিক প্রশ্নের সামনে—যোগ্যতা, আইন ও ন্যায়ের ভারসাম্য কোথায়? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নতুন পরীক্ষা আয়োজন হলে তা যেন স্বচ্ছ ও দ্রুত হয়, এটাই এখন সময়ের দাবি। আর ততদিন পর্যন্ত, এই ২৬ হাজার প্রার্থীর চোখ থাকবে আইনি পথ ও জনমতের শক্তির দিকেই।