অমিত শাহের নির্দেশ চলছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ, প্রশ্ন মানবাধিকার কর্মীর

রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী গ্রেফতারের (Bangladeshi immigrant) খবর ক্রমেই বাড়ছে। একদিনে ১২ জন, সপ্তাহে ৪০ জন কিংবা মাসে শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন…

West Bengal Police Acting on Amit Shah's Order? Human Rights Activist Raises Concerns Over Bangladeshis’ Arrests

রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী গ্রেফতারের (Bangladeshi immigrant) খবর ক্রমেই বাড়ছে। একদিনে ১২ জন, সপ্তাহে ৪০ জন কিংবা মাসে শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করছে বলে জানা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রশ্ন তুলে দিলেন মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত শূর। তাঁর মতে, “রাজ্যে বিজেপি সরকার নেই, তবুও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশ অনুসরণ করে কি এই অভিযান চালানো হচ্ছে?”

বুধবার মাঝরাতে একটি ফেসবুক পোস্টে রঞ্জিত শূর লেখেন, “খবরে দেখলাম গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ১২ জন বাংলাদেশী গ্রেফতার হয়েছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বাংলাদেশি ধরা পড়ছে। এমনকি ১৫-২০ বছর ধরে এদেশে থাকা লোকজনকেও বাংলাদেশি বলে গ্রেফতার করা হচ্ছে। হঠাৎ এটা এত বেশি ঘটছে কেন?”

   

কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা ঘিরে প্রশ্ন
রঞ্জিতের দাবি, ১৮ মে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দপ্তর থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সার্কুলার জারি করা হয়। সেই নির্দেশিকায় দেশের সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে বলা হয়েছে, অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গা শনাক্ত করতে প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশেষ টাস্ক ফোর্স (STF) গঠন করতে হবে। অভিযুক্তদের ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো এবং এক মাসের মধ্যে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, তাদের পুশব্যাক করার কথাও বলা হয়েছে।

এই সার্কুলার জারি হওয়ার পর থেকেই, বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে, হঠাৎ করে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে তৎপরতা বেড়েছে। অথচ পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকার নেই। তাহলে কেন এখানে এত সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেফতার হচ্ছেন? প্রশ্ন উঠেছে, “রাজ্য সরকার কি তাহলে অমিত শাহের নির্দেশ কার্যকর করছে?”

মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান কি?
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা প্রসঙ্গে একবার একটি সভায় বলেছিলেন, “আমরা এই নির্দেশ মানি না, চ্যালেঞ্জ করব।” কিন্তু বাস্তবে এই চ্যালেঞ্জ কোথায় গেল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন রঞ্জিত শূর। তাঁর মতে, “চ্যালেঞ্জ ট্যালেঞ্জ কিছুই দেখলাম না। যেন সবাই ভুলে গেছে বিষয়টা।”

মানবাধিকার কর্মী হিসেবে রঞ্জিত আরও বলেন, “আদালত, মানবাধিকার কমিশন, এমনকি পরিযায়ী ইস্যু নিয়ে সরব দলগুলিও কেউ এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে না। কেন তৃণমূল কংগ্রেস বা বাম দলগুলি চুপ করে আছে?”

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ও মামলার রহস্য
সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের এক বিচারপতি পরিযায়ী ও অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে আচমকা এই ধরপাকড় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি জানতে চেয়েছেন, “সব রাজ্যে হঠাৎ করে পরিযায়ীদের উপর নির্যাতন কেন বাড়ছে?” কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেই মামলায় কেউই কেন্দ্রীয় সার্কুলারটির প্রসঙ্গ তোলে না। এমনকি মামলাকারীর পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে—সে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলেই জানা যাচ্ছে।

Advertisements

তথ্য জানাক রাজ্য সরকার
রঞ্জিত শূরের সোজাসাপটা প্রশ্ন, “রাজ্য সরকার জানাক—গত কয়েক মাসে কতজন মানুষকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে গ্রেফতার করা হয়েছে? তারা কারা? কবে, কেন, কীভাবে এদেশে এসেছিল? কত বছর ধরে এখানে আছে? পরিচয়পত্র বা নথি কী দেখিয়েছে তারা? রাজ্য সরকারের উচিত বিস্তারিতভাবে এই তথ্য প্রকাশ করা। তাহলে যদি সন্দেহ ভুল প্রমাণিত হয়, আমরা সকলেই স্বস্তি পাব।”

রাজনৈতিক বোঝাপড়ার অভিযোগ
এত বাংলাদেশি গ্রেফতারের ঘটনায় রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন মানবাধিকার কর্মী। তাঁর মতে, “এটা কি কেন্দ্রের সঙ্গে বোঝাপড়া? চাপের ফলে রাজ্য সরকার এই নির্দেশ কার্যকর করছে? কারণ, এত বাংলাদেশিকে ধরা পড়া নিছক কাকতালীয় মনে হয় না।”

তিনি আরও বলেন, “একটা সময় অনুব্রত মণ্ডলের মতো দাপুটে নেতারা প্রকাশ্যে বলতেন, আমাদের ওখান থেকে লোক এনে ভোট করাতে হয়। সেই মানুষগুলো কি আজ হঠাৎ করে অনুপ্রবেশকারী হয়ে গেলেন?”

মানবিকতার প্রশ্ন
রঞ্জিত শূর আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “যদি ১৫-২০ বছর ধরে এদেশে থাকা একজন মানুষ, যার পরিবার, চাকরি, সন্তান সবকিছু এখানে গড়ে উঠেছে, তাকেও যদি বাংলাদেশি বলে গ্রেফতার করা হয়—তবে এটা শুধু আইনি নয়, মানবিকতার দিক থেকেও প্রশ্নবিদ্ধ।”

এই ঘটনার মাধ্যমে একটি বড় প্রশ্ন সামনে উঠে এসেছে—পশ্চিমবঙ্গে কি কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের অভিপ্রায়ই কার্যকর হচ্ছে? একদিকে রাজ্য সরকারের চুপিসারে পদক্ষেপ, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় নির্দেশ মানার মতো পরিস্থিতি—এই দ্বৈততা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। মানবাধিকার কর্মীর চোখে, এটা শুধু আইন প্রয়োগের প্রশ্ন নয়, এটা রাজনীতি, প্রশাসনিক চাপ এবং নাগরিক অধিকারের গভীর সংকট।
রাজ্য প্রশাসনের কাছ থেকে স্পষ্ট উত্তর না আসা পর্যন্ত এই বিতর্ক থামার নয়, বরং আরও জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।