মমতার বৈঠক থেকে অনিকেতদের অনুপস্থিতি, প্রতিবাদী সংগঠনের তরফে বড় সিদ্ধান্ত

রাজ্য সরকারের সঙ্গে চিকিৎসক মহলের সম্পর্কের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল কংগ্রেস গত কয়েক মাস ধরে যোগাযোগ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ২০২৩ সালের আরজি কর-কাণ্ডের পর থেকে…

West Bengal Junior Doctors to Skip CM's Doctor Meeting Today

রাজ্য সরকারের সঙ্গে চিকিৎসক মহলের সম্পর্কের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল কংগ্রেস গত কয়েক মাস ধরে যোগাযোগ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ২০২৩ সালের আরজি কর-কাণ্ডের পর থেকে রাজ্যে চিকিৎসকদের মধ্যে সরকারের প্রতি অসন্তোষের বাতাবরণ তৈরি হয়।

এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের সমর্থন পেতে নতুন বছরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সোমবার, অর্থাৎ আজ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের চিকিৎসক মহলের সঙ্গে আবারও এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিতে চলেছেন, কিন্তু সেখান থেকে একদম আলাদা অবস্থান নিয়েছে কিছু প্রতিবাদী চিকিৎসক সংগঠন।

   

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে শুরু থেকেই একটি ধোঁয়াশা ছিল, বিশেষ করে WBJDF (West Bengal Junior Doctors’ Federation) এর সদস্যদের উপস্থিতি নিয়ে। এই সংগঠনটি আরজি কর-কাণ্ডের পর থেকেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে এবং তাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এই সংগঠনের সদস্যরা সোমবারের বৈঠকে অংশ নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট, যাদের নেতৃত্বে অনিকেত মণ্ডল ছিলেন, তাও একটি প্রধান সংগঠন, যারা সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে। তাঁদের বক্তব্য, সরকার তাঁদের অনেক দাবিই পূর্ণ করেনি এবং তাই মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে অংশ নিতে তারা অনিচ্ছুক।

জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের প্রায় আড়াই হাজার চিকিৎসক উপস্থিত থাকবেন, তবে এই বৈঠকে জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের সদস্যরা থাকছেন না। তারা অভিযোগ করেছে যে, তাদের দীর্ঘদিনের দাবিগুলির মধ্যে বেশ কিছু আজও পূর্ণ হয়নি, এবং সরকারের প্রতিশ্রুতির যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা মানে নিজেদের দাবিকে উপেক্ষিত করা, এই ধারণায় তাঁরা বৈঠকে অংশ নিতে রাজি হননি।

এদিকে, যদিও জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট বৈঠকে অংশ নেবে না, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠন, জুনিয়র ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (JDAS) বৈঠকে অংশ নিতে সম্মত হয়েছে। এই সংগঠনটি চিকিৎসকদের নানা সমস্যা ও দাবির সমাধানের জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। JDAS এর সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান প্রত্যাশা করছেন।

বৈঠকে কি হবে আলোচনা?

মুখ্যমন্ত্রীর এই বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। রাজ্যে চিকিৎসা সেবার মান ও সংক্রান্ত নানা সমস্যা যেমন স্যালাইন-কাণ্ড, জাল ওষুধের সমস্যা, রেফার রোগের অভিযোগ, এই সমস্ত বিতর্কিত বিষয়গুলির সমাধানে তৎপর হতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিকিৎসকরা দীর্ঘদিন ধরেই এসব সমস্যার প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছেন। বৈঠকে এই বিষয়গুলির উপর বিশেষ আলোচনা হতে পারে এবং সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারকে চাপ দেওয়া হতে পারে।

মুখ্যমন্ত্রী এই বৈঠকে নিশ্চিতভাবে স্বাস্থ্য খাতে আরও উন্নতির জন্য কিছু নতুন পদক্ষেপের ঘোষণা করতে পারেন। তবে, যেখানে জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট উপস্থিত থাকবে না, সেখানে সংগঠনের পক্ষ থেকে আবারও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে পারে।

রাজনৈতিক ও সংগঠনিক প্রভাব

এই বৈঠকটি রাজ্য রাজনীতিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিতে পারে। চিকিৎসকদের মধ্যে এই বিভাজন সিপিএম, কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার চেহারা তৈরি করতে পারে। যেহেতু রাজ্যের জনগণের একটি বড় অংশ চিকিৎসকদের উপর নির্ভরশীল, তাদের মধ্যে কোন সংগঠন সরকারের পক্ষে থাকে এবং কোনটি বিরোধী, তা স্বাস্থ্য ও সামাজিক নীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে, কারণ স্বাস্থ্য খাতের উন্নতি না হলে ভোটের বাজারে তৃণমূলের জন্য ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে, তিনি এই বৈঠকটি সফল করতে এবং চিকিৎসকদের মধ্যে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।