উচ্চমাধ্যমিক (Higher Secondary Education) স্তরে পরীক্ষায় টোকাটুকি ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো গুরুতর সমস্যা রুখতে এবার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিল পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা (Higher Secondary Education) সংসদ। সেমেস্টার পদ্ধতির পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো সংসদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রতিটি বিষয়ের জন্য দু’টি করে প্রশ্নপত্র সেট তৈরি করে তা পাঠানো হবে কাস্টডিয়ানের (যেমন থানা বা সংশ্লিষ্ট পুলিশ স্টেশন) কাছে। এমন সিদ্ধান্ত এইচএস-এর ইতিহাসে এই প্রথম।
সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) একটি সাংবাদিক বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, “সব কেন্দ্রে ‘সেট ১’ প্রশ্নপত্রেই পরীক্ষা হবে। কিন্তু যদি কোনো জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়— যেমন প্রশ্নপত্র খোলার আগে সেট ১–এর খামে ত্রুটি ধরা পড়ে, বা অন্য কোনো নিরাপত্তাজনিত সমস্যা দেখা দেয়— তাহলে আমার নির্দেশে সেট ২ প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে। তা না হলে, সেট ২–এর প্যাকেট খোলা যাবে না, কাস্টডিয়ানের কাছেই তা সিলবন্দি অবস্থায় থাকবে।”
কেন এই পদক্ষেপ?
গত কয়েক বছর ধরে উচ্চ মাধ্যমিক(Higher Secondary Education) এবং অন্যান্য বোর্ড পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়। যদিও শিক্ষা সংসদ বারবার জানিয়েছে যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনও প্রমাণ মেলেনি, তথাপি সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়ানো কিছু প্রশ্নপত্রের ছবি, ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, এবং অভিভাবকদের উদ্বেগ প্রশাসনকে চিন্তায় ফেলেছে।
এই প্রেক্ষিতে, প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংসদ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হল এই ‘ডুয়েল সেট’ ব্যবস্থা।
কীভাবে কাজ করবে এই ব্যবস্থা?
প্রতিটি বিষয় অনুযায়ী দু’টি করে প্রশ্নপত্র থাকবে— সেট ১ এবং সেট ২। পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রশ্নপত্র পৌঁছে যাবে সংশ্লিষ্ট থানা বা অন্য নির্ধারিত কাস্টডিয়ানদের কাছে। পরীক্ষার দিন, নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী শুধুমাত্র সেট ১ খোলা হবে ও তা ব্যবহার করেই পরীক্ষা নেওয়া হবে।
যদি কোনও কেন্দ্রের প্রশ্নপত্র খোলার সময় দেখা যায় সেট ১ প্রশ্নপত্র ছেঁড়া, অস্পষ্ট বা অন্য কোনওভাবে পরীক্ষার অযোগ্য, সেক্ষেত্রে কাস্টডিয়ান ও সংসদের অনুমতি নিয়ে সেট ২ ব্যবহার করা যাবে। তবে একমাত্র সভাপতি নির্দেশ দিলে তবেই সেট ২ খোলা যাবে। এর ফলে প্রশ্নফাঁস বা আগে থেকে প্রশ্নপত্র জেনে নেওয়ার সম্ভাবনা কার্যত শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে বলে মনে করছে সংসদ।
বাড়ছে নজরদারি
এছাড়াও প্রশ্নপত্র পরিবহন ও সংরক্ষণের প্রক্রিয়ায় নজরদারি আরও কড়াকড়ি করা হচ্ছে। প্রশ্নপত্র যে গাড়িতে বহন করা হবে, তা হবে সিসিটিভি ও জিপিএস ট্র্যাকিং-যুক্ত। কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম থেকে নজরদারি চালানো হবে সরাসরি। প্রশ্ন খোলার সময়েও থাকবে ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা।
ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া
এই সিদ্ধান্তে শিক্ষক ও অভিভাবক মহলে স্বস্তি দেখা গেছে। বহু শিক্ষকই মনে করছেন, এই ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলে ছাত্রছাত্রীদের মনোবল আরও বাড়বে, কারণ তারা জানবে যে কোনওরকম অনৈতিক উপায়ে নম্বর পাওয়ার সুযোগ নেই।
একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বহু ছাত্রছাত্রীও মনে করছে, এমন সিদ্ধান্তে পরীক্ষার মান বাড়বে এবং প্রকৃত মেধাবীরা মূল্যায়িত হবে। যদিও কিছু ছাত্রছাত্রী প্রশ্নপত্রে বেশি কড়াকড়ি হওয়ায় কিছুটা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তবে তারা একমত যে টোকাটুকি বন্ধ হলে পরিবেশ আরও স্বচ্ছ হবে।
পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের (Higher Secondary Education) এই নতুন সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী এবং সাহসী পদক্ষেপ। যদি তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করা যায়, তবে প্রশ্নফাঁস ও অনৈতিকতা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। শিক্ষার মানোন্নয়নে এবং ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত গঠনে এই পদক্ষেপ এক বড় ভূমিকা নেবে বলেই আশাবাদী অভিভাবক ও শিক্ষক সমাজ।