গত কয়েকদিন ধরে বিকাশ ভবন (Bikash Bhavan) নিয়ে চরম উত্তেজনা ও বিতর্ক চলছিল রাজ্য প্রশাসনে। এই আবহেই অবশেষে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। নবান্নে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, “বিকাশ ভবন রাজ্য সরকারেরই সম্পদ। এখান থেকে প্রশাসনিক কাজ চলবে, তবে কিছু সংস্কার ও পুনর্গঠনের পথে আমরা হাঁটছি।”
বিকাশ ভবন মূলত শিক্ষা দপ্তরের সদর দফতর হিসেবেই পরিচিত। বহু বছর ধরে এখান থেকেই উচ্চ শিক্ষা, স্কুল শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগগুলি পরিচালিত হয়ে এসেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু প্রশাসনিক অনিয়ম, অভিযোগ, ফাইল জট এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠে আসে। এই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠতে থাকে, বিকাশ ভবনের ভবিষ্যৎ কী? প্রশাসনিক দিক থেকে এটি আদৌ কার্যকরী কি না, সে নিয়েও সংশয় দেখা দেয়।
এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, “আমি নিজে বিকাশ ভবনে গিয়ে পরিদর্শন করেছি। কর্মীরা কষ্ট করছেন, পরিকাঠামো উন্নত করা দরকার। তবে সেটাকে গুঁড়িয়ে ফেলে দেওয়ার প্রশ্ন নেই। আমরা আধুনিকীকরণের পথে হাঁটব।”
সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের তরফ থেকে ইতিমধ্যে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা বিকাশ ভবনের পরিকাঠামো, কর্মী কাঠামো, এবং প্রশাসনিক কার্যপ্রণালী খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বিকাশ ভবনে কী পরিবর্তন আনা হবে।
অন্যদিকে, শিক্ষামন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিকাশ ভবনের কিছু বিভাগ সম্ভবত নবান্ন বা অন্যান্য বিকেন্দ্রীভূত দফতরে স্থানান্তরিত করা হতে পারে, যাতে কেন্দ্রীয়ভাবে ফাইল জট না বাড়ে এবং কাজের গতি বেড়ে যায়। এর ফলে শিক্ষা সংক্রান্ত পরিষেবাও আরও দ্রুততার সঙ্গে নাগরিকদের কাছে পৌঁছাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিপক্ষ অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে সন্দেহের চোখে দেখছে। তাদের দাবি, “বিকাশ ভবনের সংস্কারের নামে সরকার আসলে শিক্ষা প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে।” বামপন্থী শিক্ষক সংগঠনগুলির একাংশের মতে, রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে যে অরাজকতা চলছে, তার মূল কেন্দ্রই হল বিকাশ ভবন। সেই সমস্যার সমাধানে শুধু পরিকাঠামোগত পরিবর্তন নয়, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও যোগ্যতা ভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া জরুরি।
তবে শাসকদলের দাবি, “সরকার এই ভবনকে নতুন চেহারায় গড়ে তুলবে, আধুনিক প্রযুক্তি, ডিজিটাল ফাইলিং ব্যবস্থা, এবং দক্ষ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে।”
মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, “বিকাশ ভবন থাকবে। কিন্তু সেই সঙ্গে থাকবে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, এবং দ্রুত পরিষেবা দেওয়ার দায়বদ্ধতা।” তাঁর এই মন্তব্য রাজ্য প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থার পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পরিশেষে বলা যায়, বিকাশ ভবন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই অবস্থান একদিকে যেমন ভবিষ্যতের পথরেখা স্পষ্ট করে দিল, তেমনি বর্তমানের সমস্যাকেও স্বীকার করে নিল। এখন দেখার, বাস্তবে এই আশ্বাস কতটা কার্যকর হয় এবং কতটা বদল আনে রাজ্যের শিক্ষা প্রশাসনে।