আসন্ন শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষাকে (Teacher Recruitment Exam) কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের তরফে নেওয়া হয়েছে কড়া পদক্ষেপ। স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ স্তরের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা যাতে একেবারে নিরবচ্ছিন্ন ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়, তা নিশ্চিত করতেই নবান্ন থেকে জেলাশাসকদের উদ্দেশে বিশেষ নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। আগামী ৭ ও ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫—এই দুই দিন রাজ্যজুড়ে এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রায় ৫.৮ লক্ষ পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন
দুটি দিনে মিলিয়ে প্রায় ৫ লক্ষ ৮০ হাজার পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষায় বসবেন। সংখ্যার গুরুত্ব ও সংবেদনশীলতা মাথায় রেখে রাজ্য প্রশাসন বহুস্তরীয় নিরাপত্তা ও তদারকির পরিকল্পনা করেছে। রাজ্যের মুখ্য সচিব নিজে এই নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন এবং জানিয়েছেন—পরীক্ষার স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
প্রধান নির্দেশিকা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
অতিরিক্ত জেলাশাসক পর্যবেক্ষণে: প্রতিটি জেলায় একজন অতিরিক্ত জেলাশাসক পদমর্যাদার আধিকারিক পুরো পরীক্ষার তত্ত্বাবধানে থাকবেন। তাঁর অধীনে চলবে সব কেন্দ্রের কার্যক্রম ও পর্যবেক্ষণ।
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিতি বাধ্যতামূলক: প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট র্যাঙ্কের সরকারি আধিকারিক উপস্থিত থাকবেন। তাঁদের দায়িত্ব হবে কেন্দ্রের শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও প্রতিটি পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করা।
সিসিটিভি নজরদারি: প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে বাধ্যতামূলকভাবে বসাতে হবে সিসিটিভি ক্যামেরা। পরীক্ষার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার রেকর্ডিং রাখা হবে ভবিষ্যতের জন্য, যাতে কোনও অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রমাণ পাওয়া যায়।
ফ্রিস্কিং ও পুলিশ তদারকি: প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে হবে ফ্রিস্কিং (শারীরিক তল্লাশি)। কীভাবে ফ্রিস্কিং হবে, তার সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ প্রশাসন। পরীক্ষার্থীরা কোনও রকম ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা নিষিদ্ধ সামগ্রী নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।
মোবাইল ও ঘড়ি নিষিদ্ধ: পরীক্ষার্থীদের জন্য মোবাইল ফোন আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ মোবাইলসহ ধরা পড়লে তার পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হবে। একইভাবে, হাতে ঘড়ি পরে কেন্দ্রে ঢোকা যাবে না। সময় জানার জন্য প্রতিটি পরীক্ষার ঘরে থাকবে ওয়াল ক্লক।
পরীক্ষার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ: পরীক্ষা চলাকালীন বাইরে থেকে কোনও ধরণের বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। পরীক্ষা কেন্দ্রের চারপাশে পুলিশ টহল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।
নবান্নের নির্দেশিকায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে—শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে পূর্বে নানা অভিযোগ উঠেছে। তাই এবারের পরীক্ষা যেন একেবারে নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং সুষ্ঠু হয়, তা নিশ্চিত করাই সরকারের উদ্দেশ্য। রাজ্য প্রশাসন চায়, এই প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা ফিরে আসুক এবং যোগ্য প্রার্থীরাই নিয়োগপ্রাপ্ত হোন।
পরীক্ষার্থীদের আগে থেকেই জানানো হচ্ছে—নির্দেশিকা ভঙ্গ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোবাইল, ঘড়ি, ক্যালকুলেটর, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট বা কোনও অননুমোদিত সামগ্রী আনা যাবে না। পরীক্ষা কেন্দ্রে সময়মতো উপস্থিত হওয়ার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কারণ দেরি করলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
৭ ও ১৪ সেপ্টেম্বরের এই পরীক্ষা শুধুমাত্র শিক্ষক নিয়োগের জন্য নয়, বরং রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের এক বড় পরীক্ষা বলেও ধরা হচ্ছে। প্রশাসনিক তৎপরতা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং কঠোর নজরদারি মিলিয়ে এবার কোনও অনিয়মের সুযোগ থাকবে না বলে দাবি রাজ্যের। এখন অপেক্ষা, এই কড়া নির্দেশিকার মধ্যে দিয়ে কতটা সফলভাবে পরীক্ষাগুলি সম্পন্ন হয়।