কলকাতা: সম্প্রতি একাধিক সেতু (Bridge) দুর্ঘটনার ঘটনা সামনে আসার পর রাজ্যজুড়ে সেতুর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এই প্রেক্ষিতেই বড় সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। বুধবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, রাজ্যের সব সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু করেছে সরকার। পূর্ত দফতর ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, “রাজ্যের প্রায় ২২০০টির বেশি সেতু ( Bridge) রয়েছে। তার মধ্যে অন্তত ১৫০টি সেতুর অবস্থা নিয়ে বিশেষভাবে সতর্ক রয়েছি আমরা। প্রতিটি সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে। প্রয়োজনে মেরামতি বা পুনর্গঠন করা হবে।”
২০১৬ সালে নির্মীয়মাণ পোস্তা সেতু এবং ২০১৮ সালে মাঝেরহাট সেতু (Bridge) ভেঙে পড়ার পর থেকেই রাজ্য সরকার সেতু নিরাপত্তার বিষয়ে তৎপর হয়েছে। এই দুই বড় দুর্ঘটনার পর কলকাতা এবং জেলাগুলিতে একাধিক সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছিল। তারই পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে টালা সেতু ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, বর্তমানে গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে পূর্ত দফতরের অধীনে ২২০০টিরও বেশি সেতু (Bridge) রয়েছে। এই সেতুগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও রিপোর্ট তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনটি জোনের মুখ্য ইঞ্জিনিয়ারদের। তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দ্রুত রিপোর্ট প্রস্তুত করে পূর্ত দফতরের কাছে জমা দিতে।
সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো— প্রতিটি সেতুর (Bridge) বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন, দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং সম্ভাব্য বিপদ এড়ানোর জন্য আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, পরীক্ষার পর রিপোর্টের ভিত্তিতে কিছু সেতুতে হাইট বার বসানো, ভারী যান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং আরও বিভিন্ন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কেএমডিএ-র এক কর্তা জানিয়েছেন, “স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট ইতিবাচক হলেও, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা অপরিহার্য। যাতে ভবিষ্যতে আর কোনও সেতু বিপর্যয়ের ঘটনা না ঘটে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, কলকাতা ও শহরতলির সেতুগুলিতে রেল ও সড়কপথের উপর অতিরিক্ত লোড, দখলদার সমস্যা এবং বার্ধক্যজনিত অবস্থা বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি শহরের অব্যবস্থাপনা ও অবৈধ নির্মাণও অনেক ক্ষেত্রে সেতুর স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ।
পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই রাজ্যের সমস্ত সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। তারপরে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে সাধারণ মানুষও সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। কারণ বিগত কয়েক বছরে একাধিক সেতু দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনও টাটকা। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, “নিরাপত্তার স্বার্থে সময়ে সময়ে এই ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ রাজ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার নিরাপত্তা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। এখন দেখার, আগামী দিনে এই পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হয় এবং সেতু বিপর্যয় রুখতে কতটা সফল হয় রাজ্য সরকার।