জঙ্গলমহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষা-মিছিল, ৬ আগস্ট ঝাড়গ্রামে জনজোয়ার

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নসাধনার ভূমি শান্তিনিকেতনের পর এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) পদক্ষেপ জঙ্গলমহলের প্রাণকেন্দ্র ঝাড়গ্রামের দিকে। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় এবার সরব হচ্ছেন…

Mamata Banerjee Birbhum Visit

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নসাধনার ভূমি শান্তিনিকেতনের পর এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) পদক্ষেপ জঙ্গলমহলের প্রাণকেন্দ্র ঝাড়গ্রামের দিকে। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় এবার সরব হচ্ছেন তিনি জঙ্গলমহল থেকে। আগামী ৬ আগস্ট, ঝাড়গ্রাম শহরের রাজবাড়ির মোড় থেকে সার্কাস ময়দান পর্যন্ত আয়োজিত হতে চলেছে এক বিশাল ভাষা-মিছিল, যেখানে মমতা নিজে নেতৃত্ব দেবেন।

এই মিছিল শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়—এটি রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, মাতৃভাষার সম্মান এবং আদিবাসী গর্বের প্রতীক হয়ে উঠতে চলেছে। মিছিলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, লেখক, শিল্পী, সমাজকর্মী, শিক্ষক-অধ্যাপক এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষজন। জঙ্গলমহলের আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধিরাও মিছিলে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গিয়েছে।

   

প্রতিবাদের প্রেক্ষাপট

সম্প্রতি বাংলা ভাষা নিয়ে বিজেপি নেতাদের একাধিক মন্তব্য এবং কিছু প্রশাসনিক সিদ্ধান্তকে ঘিরে রাজ্যজুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বাংলা ভাষার গুরুত্ব খর্ব করার চক্রান্ত চলছে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানে হিন্দি ও ইংরেজিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাকে ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের কিছু সংবেদনশীল এলাকাতেও বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে।

মুখ্যমন্ত্রী এই অবস্থাকে ‘বাংলা ভাষার উপর ঘৃণ্য আক্রমণ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি আগেই জানিয়েছিলেন, শুধু রাজনীতি নয়—ভাষা, সংস্কৃতি, স্বভিমানের প্রশ্নে কোনওরকম আপস করা হবে না। শান্তিনিকেতনের ভাষা-মিছিলে যোগ দিয়ে সেই বার্তাই স্পষ্ট করেছেন, আর এবার তিনি যাচ্ছেন ঝাড়গ্রাম।

ঝাড়গ্রাম: প্রতিরোধের প্রতীক

Advertisements

ঝাড়গ্রাম শুধু একটি জেলা নয়—এটি জঙ্গলমহলের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, যেখানে বহু ভাষা, জাতি, সম্প্রদায়ের মানুষ সহাবস্থান করে আসছেন। এখানকার আদিবাসী সমাজের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলার আত্মিক বন্ধন রয়েছে। তাই এই অঞ্চল থেকে ভাষার প্রশ্নে প্রতিবাদ শুরুর তাৎপর্য গভীর।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর এই পদযাত্রা একদিকে যেমন ভাষার মর্যাদার প্রশ্নে তৃণমূলের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে, তেমনই বিজেপিকে কড়া বার্তাও দেবে। কারণ সম্প্রতি এই অঞ্চলকে বিজেপি রাজনৈতিকভাবে টার্গেট করছে এবং আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ।

সম্প্রীতির বার্তা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে সম্মান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা চাই হিন্দিও থাক, ইংরেজিও থাক, কিন্তু বাংলার উপর যেন আক্রমণ না হয়। মাতৃভাষার অসম্মান মানা যায় না।” এই মিছিল সেই বার্তাই তুলে ধরবে—যে বাংলার সংস্কৃতি ও ভাষার উপর কোনও আক্রমণ হলে গোটা সমাজ একত্রিত হয়ে প্রতিবাদে নামবে।