কলকাতা: স্বাধীনতা দিবসের বিকেল মানেই রাজভবনের প্রথাগত চা চক্র। প্রতিবছরের মতো এ বছরও সেই আয়োজন ছিল যথাযোগ্য মর্যাদায়। শুক্রবার বিকেল ৫টা নাগাদ রাজভবনের প্রাঙ্গণ সেজে উঠেছিল সবুজে-লাল-সাদা রঙে, দেশাত্মবোধক আবহে। আমন্ত্রিত অতিথিদের আনাগোনা শুরু হয় বিকেল গড়ানোর আগেই।
প্রথম সারির রাজনৈতিক মহল, সাংস্কৃতিক জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, প্রশাসনিক শীর্ষকর্তা—সবাই একত্রিত হলেন এক ছাদের নিচে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে সঙ্গে নিয়ে রাজভবনে পৌঁছন। সাদা শাড়ি, নীল পাড়, পরনে পরিচিত সাদা চটি—সব মিলিয়ে একেবারে স্বভাবসুলভ সাজে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে হাজির ছিলেন বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী উষা উত্থুপ, যিনি তাঁর স্বকীয় সাজে নজর কাড়লেন সবার।
রাজভবনের মূল প্রাঙ্গণে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ও তাঁর স্ত্রী করজোড়ে স্বাগত জানান অতিথিদের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে উষ্ণ অভ্যর্থনা বিনিময় হয় রাজ্যপালের, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিবাচক বার্তা দিল বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
এরপরই রাজ্যপালের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে রাজভবনে উপস্থিত হন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের স্বাভাবিক সৌজন্যমূলক কথা হয়। রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও স্বাধীনতা দিবসের মতো দিনে এই সৌহার্দ্য বিনিময় এক ধরনের গণতান্ত্রিক বার্তা বহন করে, যা রাজ্য রাজনীতিতে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
রাজভবনের চা চক্র শুধুমাত্র রাজনৈতিক আড্ডার জায়গা নয়, বরং সংস্কৃতি ও শিল্পের মিলনমেলা বলেও পরিচিত। এদিনও ছিল তার ব্যতিক্রম নয়। অতিথিদের জন্য পরিবেশন করা হয় দার্জিলিং চা, বিভিন্ন ধরনের স্ন্যাক্স, রাজভবনের নিজস্ব কেক ও মিষ্টান্ন। সঙ্গীতের আবহে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন কয়েকজন আমন্ত্রিত শিল্পী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করে রাজ্যপালের সঙ্গে পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও আলাপচারিতায় মগ্ন হন। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস তাঁর বক্তব্যে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং সমবেত অতিথিদের উদ্দেশে বলেন, “এই দিন শুধু উদযাপনের নয়, দায়িত্ব পালনেরও স্মারক।”
রাজ্য প্রশাসনের একাধিক শীর্ষকর্তা, বিচারপতিরাও উপস্থিত ছিলেন এই বিশেষ আয়োজনে। অনেকে মনে করছেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মাঝেও এই ধরনের সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ রাজনীতিতে এক ধরনের ভারসাম্য আনে। বিশেষত, স্বাধীনতা দিবসের মতো জাতীয় উৎসব সেই ভারসাম্যের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে।
চা চক্র শেষে ধীরে ধীরে রাজভবন ফাঁকা হতে শুরু করে। অতিথিরা রাজ্যপাল ও তাঁর পরিবারের আতিথেয়তার প্রশংসা করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “স্বাধীনতা দিবস আমাদের সবার। রাজনৈতিক ভেদাভেদ এখানে জায়গা পায় না। আজকের দিনটা ঐক্যের দিন।”
এভাবেই প্রতি বছরের মতো ৭৯তম স্বাধীনতা দিবসেও রাজভবনের চা চক্র হয়ে উঠল এক মিলনক্ষেত্র, যেখানে রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সৌহার্দ্যের সেতুবন্ধন ঘটল এক বিকেলের জন্য।