‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’-এ এবার মন্ত্রীদের উপস্থিতি নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী

রাজ্যের নতুন কর্মসূচি ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’(Amader Para Amader Samadhan)-এর কার্যকারিতা ও সফলতা নিশ্চিত করতে এবার কঠোর নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নবান্নে প্রশাসনিক…

Mamata Banerjee NRC protest

রাজ্যের নতুন কর্মসূচি ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’(Amader Para Amader Samadhan)-এর কার্যকারিতা ও সফলতা নিশ্চিত করতে এবার কঠোর নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন— এবার থেকে এই কর্মসূচিতে এলাকার নির্বাচিত মন্ত্রীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। জেলাশাসকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখে, মাঠ পর্যায়ে গিয়ে মানুষের সমস্যার কথা শুনে সমাধানের ব্যবস্থা করার নির্দেশও দেন তিনি।

গত ২ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়া ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ প্রকল্প চলবে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। তিন মাসব্যাপী এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য— সরকারি পরিষেবা ও সমস্যার সমাধানকে বুথ স্তরে পৌঁছে দেওয়া। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পুজোর সময়ও এই কর্মসূচি থামানো যাবে না। গা-ঢিলেমির কোনও সুযোগ নেই, কারণ মানুষ এই কর্মসূচির মাধ্যমে সরাসরি তাদের চাহিদা ও অভিযোগ জানাতে পারবেন।

   

প্রকল্পের কাঠামো অনুযায়ী, তিনটি বুথ মিলে একটি ‘পাড়া’ গঠিত হবে। প্রতিটি বুথের জন্য বরাদ্দ থাকবে ১০ লক্ষ টাকা। রাজ্যের মোট প্রায় ৮০ হাজার বুথের জন্য রাজ্য কোষাগার থেকে ব্যয় হবে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। রাস্তা নির্মাণ, পানীয় জলের কল বসানো, গ্রামীণ সেতু মেরামতি, স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়নসহ স্থানীয় চাহিদা মেটানোই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।

কর্মসূচি চলাকালীন রবিবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন শিবির বসবে। মানুষ সরাসরি সেখানে গিয়ে অভিযোগ জানাতে পারবেন। লক্ষ্য রাখা হয়েছে— ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সমস্ত প্রাপ্ত সমস্যার সমাধান করতে হবে। এর জন্য মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের নেতৃত্বে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী নিজে ভিডিও উপস্থাপনার মাধ্যমে জেলা প্রশাসন ও দফতরীয় আধিকারিকদের পুরো প্রক্রিয়া বোঝান— কীভাবে শিবির আয়োজন হবে, অভিযোগ সংগ্রহ করা হবে এবং সমাধান বাস্তবায়ন হবে।

এবার থেকে মন্ত্রীদের নিজের নির্বাচনী এলাকার শিবিরে সরাসরি উপস্থিত থাকতে হবে। শুধু প্রশাসনিক আধিকারিকদের উপর ভরসা না রেখে, রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও মাঠে নামতে হবে— এই বার্তাই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতে, মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখলে সমস্যার প্রকৃতি বোঝা সহজ হবে এবং দ্রুত সমাধানের পথে এগোনো যাবে।

Advertisements

‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্প রাজ্যে বিপুল সাফল্য অর্জন করেছিল। এবার মুখ্যমন্ত্রী চান, ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ও সেই সাফল্যের পথ অনুসরণ করুক। এই কর্মসূচির মাধ্যমে কেবল অভিযোগ শোনা নয়, বরং নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সমাধান দেওয়া হবে— এটাই এই উদ্যোগের বিশেষত্ব।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মানুষের আস্থা আরও বাড়ানোর কৌশল হিসেবেই এই প্রকল্পকে ত্বরান্বিত করতে চাইছে সরকার। মন্ত্রীদের সরাসরি অংশগ্রহণের ফলে প্রশাসনিক জবাবদিহিতা যেমন বাড়বে, তেমনি তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটভিত্তিও মজবুত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

মানুষের দরজায় সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দিতে মুখ্যমন্ত্রীর এই নতুন নির্দেশ বাস্তবায়িত হলে, গ্রামীণ ও শহুরে স্তরে উন্নয়নমূলক কাজের গতি ও মান— দুই-ই বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।