রাজ্য বিজেপির রাজনীতিতে গত কয়েক মাসে সবচেয়ে আলোচিত নামগুলির মধ্যে অন্যতম শমীক ভট্টাচার্য (Samik Bhattacharya) । রাজ্য সভাপতির পদে বসার পর থেকেই তিনি দলের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে চলা ‘আদি বনাম নব্য’ দ্বন্দ্বকে প্রশমিত করার চেষ্টা করছেন। বিজেপির ভিতরে এই বিভাজন নতুন কিছু নয়। ২০১৪ সালের পর যখন একঝাঁক নেতা–নেত্রী দল পরিবর্তন করে বিজেপিতে যোগ দেন, তখন থেকেই পুরনো কর্মী ও নতুন আসা নেতৃত্বের মধ্যে এক অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই অস্বস্তি দ্বন্দ্বে রূপ নিয়েছে।
শমীক ভট্টাচার্য (Samik Bhattacharya) দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রকাশ্য মঞ্চে একাধিকবার বলেছেন, বিজেপিতে কারও পরিচয় ‘নতুন’ বা ‘পুরোনো’ নয়। তাঁর বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—“যাঁর হাতে বিজেপির ঝান্ডা আছে, তিনি-ই প্রকৃত বিজেপি কর্মী। দলের ভিতরে নতুন–পুরোনো বলে কোনও বিভাজন নেই।” তাঁর এই মন্তব্য কার্যত এক রাজনৈতিক বার্তা, যাতে বোঝানো হয়েছে দল ঐক্যবদ্ধ না হলে রাজ্যের রাজনীতিতে জায়গা করে নেওয়া কঠিন।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরে বিজেপির ভেতরে প্রকাশ্যেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছবি উঠে এসেছে। অনেক সময় দেখা গেছে, পুরনো সংগঠনিক নেতারা অভিযোগ তুলেছেন যে নতুন আসা নেতাদের হাতে বেশি ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। আবার নতুনদের একাংশের দাবি, পুরনো নেতৃত্ব দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাই নতুন রক্তের প্রয়োজন। এই পারস্পরিক দোষারোপ সাধারণ কর্মীদের মধ্যেও বিভ্রান্তি তৈরি করছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এর ফলে দলের লড়াইয়ের জায়গায় ফাটল স্পষ্ট হচ্ছে।
এই অবস্থায় শমীক ভট্টাচার্যের(Samik Bhattacharya) ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মূলত সাংগঠনিক রাজনীতির মানুষ, দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে বিজেপির মুখপত্র হিসেবেও কাজ করেছেন। ফলে সংগঠনের ভিতরকার টানাপড়েন সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল। তাই দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তাঁর প্রধান লক্ষ্য হয়েছে—দলের মধ্যে ঐক্য ফিরিয়ে আনা এবং কর্মীদের বোঝানো যে সবাই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
শমীক ভট্টাচার্যের(Samik Bhattacharya) সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলির মধ্যে বারবার উঠে এসেছে “সংগঠন আগে” প্রসঙ্গ। তিনি বলেছেন, “দল কোনও ব্যক্তির নয়, কোনও গোষ্ঠীরও নয়। দল সবার মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে।” এই মন্তব্যের মধ্য দিয়েই তিনি বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য যদি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব জারি থাকে, তবে তাতে সংগঠনই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল সাংগঠনিক ভাঙন সামাল দেওয়া। গত লোকসভা ভোটে তুলনামূলক ভালো ফল করলেও, বিধানসভা ভোটে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি। এর অন্যতম কারণ হিসাবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই দায়ী করা হয়। ফলে এখন যদি নেতৃত্বের মধ্যে মতানৈক্য আরও বাড়তে থাকে, তবে সাধারণ কর্মীদের মনোবল দুর্বল হবে, যা নির্বাচনী ফলাফলে প্রভাব ফেলতে বাধ্য।
তবে শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য শুধু দলের ভেতরে নয়, বাইরের প্রতিপক্ষের কাছেও এক কৌশলগত বার্তা। তৃণমূল কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ তুলে আসছে যে বিজেপি দল ভাঙিয়ে নিজেদের শক্তি বাড়াচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতে সভাপতির স্পষ্ট ঘোষণা, “নতুন–পুরোনো বলে কিছু নেই”, কার্যত তৃণমূলের প্রচারকেও খণ্ডন করার চেষ্টা।
সব মিলিয়ে বলা যায়, রাজ্য সভাপতির আসনে বসেই শমীক ভট্টাচার্য(Samik Bhattacharya) দলের ভিতরে বিভাজন মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করছে দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের ভূমিকার উপরও। কারণ শুধু সভাপতির বার্তায় নয়, মাঠে-ময়দানে কর্মীদের অভিজ্ঞতায় পরিবর্তন আনতে হবে। যদি শমীক ভট্টাচার্য এই সমীকরণে সফল হন, তবে বিজেপির রাজ্য রাজনীতিতে নতুন দিশা খুলতে পারে। আর যদি ব্যর্থ হন, তবে পুরনো-নতুন দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়ে দলের ভবিষ্যৎ সংকটজনক হতে পারে।