বর্তমান সময়ে রাজ্য রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে বিজেপির নতুন সদর দফতর। সল্টলেক সেক্টর ফাইভে এখন যে অফিস থেকে বিজেপি কার্যত গোটা রাজ্যের সাংগঠনিক কাজ চালাচ্ছে, তা ক্রমশই ছোট হয়ে আসছে। কারণ, গত কয়েক বছরে সংগঠনের বিস্তার অনেক বেড়েছে। একদিকে কর্মীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে, অন্যদিকে দলের রণকৌশলও আরও বিস্তৃত হয়ে উঠেছে। ফলে একটি বড় জায়গার প্রয়োজনীয়তা এখন স্পষ্ট। আর সেই কারণেই ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি নজর দিয়েছে নিউটাউন চত্বরে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, শুধু বড় দফতর নয়, সেই দফতরে থাকতে হবে আধুনিক পরিকাঠামোও। একটি সুবিশাল জমি বা বাড়ির খোঁজ চলছে, যেখানে থাকবে প্রশস্ত পার্কিং এলাকা এবং সবচেয়ে বড় চাহিদা, একটি হেলিপ্যাড। কেননা, দল ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী দিনে প্রচারের জন্য প্রায় ৪ থেকে ৫টি হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হবে। অর্থাৎ, শুধু জমি বা অফিস নয়, চাই একেবারে পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক সদর দফতর, যেখান থেকে সরাসরি রাজ্যজুড়ে প্রচারের কৌশল ঠিক করা যাবে এবং প্রয়োজনে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নেতারা জেলা সফরে যেতে পারবেন।
বিজেপির এই সিদ্ধান্ত ঘিরে রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে যখন ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটে দল গোটা শক্তি ঝাঁপিয়ে দিতে চাইছে, তখনই এই ধরনের নতুন সদর দফতরের পরিকল্পনা যে অনেক বড় রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে, তা বলাই বাহুল্য। এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের একাধিক সফরের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাঁদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আরও অনেকে আগামী মাসগুলোতে বাংলায় আসবেন। ফলে প্রচারের চাপ সামলাতে এবং রণকৌশল গুছিয়ে নিতে পুরনো ছোট অফিসে আর জায়গা হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছিল। তবে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে দল প্রত্যাশিত ফল পায়নি। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে গেরুয়া শিবির এবার থেকেই আগাম প্রস্তুতিতে নেমেছে। রাজ্যের প্রতিটি জেলায় সংগঠনকে নতুন করে চাঙা করার পরিকল্পনা চলছে। সেইসঙ্গে, নেতাদের সফরসূচি আরও বাড়বে। এই পরিস্থিতিতে হেলিপ্যাডযুক্ত দফতর থাকলে নেতাদের যাতায়াত সহজ হবে বলে মনে করছে দল।
তবে এখনও পর্যন্ত সঠিক জায়গা ঠিক হয়নি। যদিও বিজেপি নেতাদের দাবি, খুব শীঘ্রই নিউটাউন বা তার আশপাশের এলাকায় একটি সুবিশাল বাড়ির খোঁজ মিলবে। সেখানে স্থায়ীভাবে অফিস গড়ে তুলতে চাইছে গেরুয়া শিবির। জানা যাচ্ছে, শুধুমাত্র প্রশাসনিক অফিস নয়, সেই সদর দফতর হবে বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী। যেমন— বড় কনফারেন্স রুম, সাংবাদিক বৈঠকের জায়গা, লাইব্রেরি, এমনকি সাংগঠনিক প্রশিক্ষণের জন্য পৃথক পরিসর রাখার পরিকল্পনাও রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এটি কেবল একটি অফিস পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নয়। আসলে ২০২৬-এর ভোটকে সামনে রেখে বিজেপি সংগঠনের শক্তি ও ক্ষমতা প্রদর্শন করতে চাইছে। নতুন দফতর থেকে প্রচারের ‘মেসেজ’ হবে আরও সুসংগঠিত। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হ frequent বাংলায় সফরকে কেন্দ্র করে দল চাইছে একেবারে ঝকঝকে সদর দফতর তৈরি করতে, যা প্রতীকী ভাবেও শক্তির বার্তা দেবে।
সব মিলিয়ে, এখনও ঠিকানা চূড়ান্ত না হলেও, বিজেপির নতুন সদর দফতর ঘিরে রাজ্যে ইতিমধ্যেই চর্চার ঝড় উঠেছে। বিরোধী শিবির কটাক্ষ করে বলছে, “দপ্তর বড় করলেই তো ভোটে জেতা যায় না!” তবে গেরুয়া শিবিরের দাবি, সংগঠন শক্তিশালী করতে এবং প্রচারে গতি আনতেই এই উদ্যোগ। এখন দেখার বিষয়, কবে চূড়ান্ত হয় নতুন দফতরের ঠিকানা, এবং সত্যিই কি হেলিকপ্টার নামবে বঙ্গ বিজেপির নতুন বাড়ির মাথায়।