Mamata Banerjee on Women’s Day: আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ‘কঠোর বার্তা’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলেছেন, প্রতিটি নারীর মধ্যে নিজের জগৎ গড়ে তোলার শক্তি ও ক্ষমতা রয়েছে, কারণ তারা কারও থেকে…

Mamata Banerjee on International Women's Day

short-samachar

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলেছেন, প্রতিটি নারীর মধ্যে নিজের জগৎ গড়ে তোলার শক্তি ও ক্ষমতা রয়েছে, কারণ তারা কারও থেকে দুর্বল বা নীচু নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে নারীদের জন্য শুধুমাত্র একটি দিন নির্দিষ্ট করা উচিত নয়, বরং প্রতিটি দিনই প্রতিটি নারীর জন্য উৎসর্গিত হওয়া উচিত। এই দিনে তিনি সকল মা ও বোনেদের উদ্দেশে বলেছেন, নিজেদের অভ্যন্তরীণ শক্তির গভীরতা উপলব্ধি করার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর নেই।

   

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, “নারীদের জন্য শুধু একটি দিন থাকা উচিত নয়, প্রতিটি দিনই প্রতিটি নারীর। প্রতিটি নারীর মধ্যে প্রতিদিন নিজের জগৎ গড়ে তোলার শক্তি ও ক্ষমতা রয়েছে। আমি আমার সকল মা ও বোনেদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি—আপনাদের শক্তির গভীরতা চিনতে এর চেয়ে উপযুক্ত সময় আর নেই। আমরা কারও থেকে দুর্বল নই, নীচুও নই। শারীরিক শক্তির বাইরে আমাদের অভ্যন্তরীণ স্থিতিস্থাপকতা, দাঁড়িয়ে লড়াই করার সাহস এবং প্রতিরোধের সংকল্পই নির্ধারণ করে আমরা কতদূর যেতে পারি এবং কত দ্রুত সামনের যুদ্ধে জয়ী হতে পারি।”

তিনি আরও বলেন, তিনি এমন একটি বিশ্বে বিশ্বাস করেন যেখানে সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে, যেখানে লিঙ্গ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের উড়ার অধিকার থাকবে। “আপনার ডানা খুঁজে নিন, আর একসঙ্গে আমরা আকাশ জয় করব। এই পৃথিবী আমাদের, জীবনের প্রতিটি স্তরের সকলের জন্য,” তিনি যোগ করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নারী দিবসে নারীদের দেবী বা ঐশ্বরিক রূপে উন্নীত না করে সমান মানুষ হিসেবে উদযাপন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আসুন আমরা এই দিনটিকে এমনভাবে সম্মান করি যাতে এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রতিটি দিন সকলের, এবং লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল মানুষ দেখা, শোনা এবং সম্মানিত হওয়ার যোগ্য।”

মমতার এই বার্তা নারী ক্ষমতায়ন এবং সমতার প্রতি তাঁর দীর্ঘদিনের অঙ্গীকারের প্রতিফলন। পশ্চিমবঙ্গে তাঁর সরকার ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’ এবং ‘স্বাস্থ্য সাথী’-এর মতো নারীকেন্দ্রিক প্রকল্পের মাধ্যমে নারীদের শিক্ষা, বিবাহে আর্থিক সহায়তা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবায় অগ্রগতি এনেছে। তিনি বারবার বলেছেন যে নারীদের সম্মান ও সুযোগ প্রদানই সমাজের প্রকৃত উন্নয়নের পথ। এই দিনে তাঁর বক্তব্যে তিনি শুধু নারীদের উৎসাহিত করেননি, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে তাঁদের সমান অংশগ্রহণের দাবি তুলেছেন।

এদিন সকালে, লোকসভায় বিরোধী দলনেতা এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও নারী দিবসে নারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “নারীরা আমাদের সমাজের মেরুদণ্ড। এই আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমি আপনাদের পাশে আছি এবং আপনাদের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—প্রতিটি বাধা ভাঙতে, যতক্ষণ না প্রতিটি নারী নিজের ভাগ্য গড়তে, স্বপ্ন পূরণ করতে এবং উচ্চতায় পৌঁছতে স্বাধীন হয়। শুভ নারী দিবস।”

একইভাবে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও নারী শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি এক্স-এ লিখেছেন, “নারী দিবসে আমরা নারী শক্তির কাছে নতজানক। আমাদের সরকার সবসময় নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করেছে, যা আমাদের প্রকল্প ও কর্মসূচিতে প্রতিফলিত। আজ, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, আমার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা নারীদের দ্বারা পরিচালিত হবে।” প্রধানমন্ত্রী গুজরাটে ‘লখপতি দিদি’ অনুষ্ঠানে নারীদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার জন্য নতুন প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন, যা তাঁর নারীকেন্দ্রিক উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ।

প্রতি বছর ৮ মার্চ বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিনটি নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক কৃতিত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য উৎসর্গিত। এই বছরের নারী দিবসে ভারতের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ নারীদের সম্মান ও সমতার বার্তা দিয়েছেন, যা দেশের নারী ক্ষমতায়নের যাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে নারীদের অভ্যন্তরীণ শক্তি এবং স্থিতিস্থাপকতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা শারীরিক শক্তির বাইরে গিয়ে আমাদের মনের জোর, সাহস এবং সংকল্পের উপর ভরসা করি। এটাই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায়।” তাঁর এই বার্তা পশ্চিমবঙ্গের নারীদের মধ্যে একটি নতুন উদ্দীপনা জাগিয়েছে, যাঁরা তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।

নারী দিবসে মমতার এই আহ্বান শুধু একটি রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং সমাজে গভীর পরিবর্তনের একটি ডাক। তিনি নারীদের দেবী হিসেবে পূজার পরিবর্তে মানুষ হিসেবে সম্মান করার উপর জোর দিয়েছেন। এটি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির একটি বাস্তবসম্মত দিক, যা নারীদের অধিকার ও সমতার প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। তিনি বলেন, “আমরা চাই না নারীদের শুধু একদিন সম্মান করা হোক। প্রতিটি দিনে তাঁদের কণ্ঠ শোনা উচিত, তাঁদের অধিকার সুরক্ষিত হওয়া উচিত।”

এই দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী এবং নরেন্দ্র মোদীর বার্তা একটি সাধারণ লক্ষ্যের দিকে ইঙ্গিত করে—নারীদের সমান সুযোগ ও সম্মান প্রদান। পশ্চিমবঙ্গে মমতার নেতৃত্বে নারীদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রকল্পগুলি ইতিমধ্যেই দেশের অন্যান্য রাজ্যের জন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে। তাঁর এই বক্তব্যে নারীদের প্রতি তাঁর অটল সমর্থন এবং সমতার প্রতি বিশ্বাস আরও স্পষ্ট হয়েছে।

নারী দিবসে এই বার্তাগুলি ভারতের নারীদের জন্য একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “এই পৃথিবী আমাদের সকলের। আমরা একসঙ্গে এগিয়ে যাব।” এই আহ্বান নারীদের কেবল উৎসাহই দেয়নি, বরং সমাজে তাঁদের সমান অংশগ্রহণের পথ প্রশস্ত করেছে।