অতিবৃষ্টির দাপটে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ফসল নষ্ট হয়ে কৃষক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সকলের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বিশেষত সবজি (vegetable price) চাষে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। মাঠে জল জমে যাওয়ায় গাছ শিকড় গজানোর আগেই পচে যাচ্ছে। কোথাও ধ্বস নেমেছে, কোথাও আবার জমে থাকা কাদাজলে নষ্ট হচ্ছে টমেটো, বেগুন, লাউ, শাক (vegetable price) ইত্যাদি মৌসুমি ফসল। কৃষকরা বলছেন, বছরের এই সময়টা সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও এবারের অতিবৃষ্টিতে তাদের সমস্ত পরিশ্রম একেবারে ভেস্তে গেছে।
কৃষকের ক্ষোভ ও হতাশা
বীরভূম, হাওড়া, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ—বেশ কিছু জেলায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। মাঠে দাঁড়ানো ফসল জলের তোড়ে ভেসে গেছে। বহু কৃষক ঋণ নিয়ে বীজ, সার, কীটনাশক কিনেছিলেন। তাঁদের আশঙ্কা, এই ক্ষতির ফলে ঋণ শোধ করা অসম্ভব হয়ে উঠবে। চাষিদের অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে এখনো পর্যন্ত কার্যকরী কোনো সাহায্যের আশ্বাস মেলেনি। অনেকেই বলছেন, ক্ষতিপূরণ না পেলে আগামী মরসুমে আর নতুন করে চাষ শুরু করার সাহস হবে না।
একজন সবজি (vegetable price) চাষি জানালেন, “মাঠে যতটুকু গাছ ছিল সব জলে ডুবে গেছে। শিকড় থেকে গাছ উপড়ে গেছে। এত টাকা খরচ করলাম, সব শেষ।” আরেকজন বললেন, “আমাদের মতো ছোট চাষিরা ফসলের ওপর নির্ভর করে সংসার চালাই। এই ক্ষতি মানে আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।”
বাজারে প্রভাব
কৃষকদের এই ক্ষতির সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাজারে। কলকাতার বড়বাজার, গড়িয়াহাট, শ্যামবাজার বা জেলার ছোটো বাজারগুলোতে সবজির দাম এক লাফে বেড়ে গেছে। সাধারণত ৩০–৪০ টাকায় (vegetable price) যে সবজি মিলত, সেখানে এখন একই জিনিসের দাম ৬০–৭০ টাকা ছুঁইছুঁই। পেঁয়াজ, আলু, টমেটো, (vegetable price) ফুলকপি, বাঁধাকপি—সব কিছুর দাম আকাশছোঁয়া। ফলে বাজারে ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও কেনাকাটার ঝুড়ি অনেকটাই হালকা।
বিক্রেতারাও সমস্যায় পড়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, পাইকারি বাজারে জোগান না থাকায় খুচরা বাজারে বিক্রির জন্য পর্যাপ্ত সবজি আনতে পারছেন না। এর ফলে আয় কমছে। অনেক সময় বেশি দামে কিনে আনলেও সেই দামে সব বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না, ফলে লোকসান বাড়ছে। এক দোকানদার জানালেন, “সবজির জোগান নেই বললেই চলে। যতটুকু আসছে, দাম এতটাই বেশি যে বিক্রি করাও কঠিন।”
ভোক্তার দুশ্চিন্তা
সাধারণ মানুষের জন্য এ এক বড় বোঝা। মুদিখানা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন রসদ জোগাড় করতে গিয়ে এখন অনেকেই অসুবিধায় পড়ছেন। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর উপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। অনেক গৃহিণী জানাচ্ছেন, আগের মতো বিভিন্ন সবজি একসাথে কিনতে পারছেন না। যা সস্তা পাওয়া যায়, তাই দিয়েই সংসার চালাতে হচ্ছে।
প্রশাসনের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ আশঙ্কা
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিবৃষ্টি শুধু বর্তমান ফসলের ক্ষতি করেনি, বরং আগামী মরসুমের জন্যও বিপদ ডেকে আনতে পারে। জমিতে দীর্ঘদিন জল জমে থাকলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়, ফলে পরের মরসুমেও চাষ কঠিন হবে। কৃষকরা দাবি তুলেছেন দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাপ করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। যেখানে ফসল নষ্ট হয়েছে সেখানে ক্ষতির রিপোর্ট তৈরি করা হবে। তবে চাষিদের আশা, কেবল রিপোর্ট নয়, দ্রুত কার্যকরী সাহায্যই এখন সবচেয়ে জরুরি।