লোকসভা ভোটে নিজের কেন্দ্রে গতবারের থেকে আরও বেশি মার্জিনে জিতেছেন এই সাংসদ (Saugata Roy)। পরপর চারবার টানা সংসদে যাওয়ার রেকর্ডও করে ফেলেছেন তিনি এই কেন্দ্র থেকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যেন বিষাদের সুর তাঁর গলায়। একপ্রকার অবসরের ঘোষণা করে দিলেন তিনি নিজের সংবর্ধনা সভা থেকেই। আর তাই নিয়েই তৃণমূল শিবিরে শুরু জোর জল্পনা।
প্রায় ৭০,০০০ এর কাছাকাছি ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে দমদম লোকসভা কেন্দ্রে সবুজ ঝড় তুলেছেন বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়। কিন্তু এরপর আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে নারাজ তিনি। নিজের সংসদীয় এলাকা বরাহনগরে এক সংবর্ধনা সভায় এসে জনসমক্ষে সেই কথাই মন খুলে জানিয়ে দিলেন তিনি।
কিন্তু হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তের কারণ কী? সেটা নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বেশ ভালো মার্জিনে জয় এলেও নিজের লোকসভার একাধিক পুরসভায় ধস নেমেছে ঘাসফুলের ভোট ব্যাঙ্কে। উত্তর দমদম, পানিহাটি, নিউ ব্যারাকপুরের মত পুরসভাগুলোতে বেশ কিছু ওয়ার্ডে অত্যন্ত খারাপ ফল হয়েছে শাসক শিবিরের। অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে সিপিআইএমের সুজন চক্রবর্তী যদি ভোট না কাটতেন, তাহলে কিন্তু গল্পটা অন্যরকম হলেও হতে পারত। তাহলে কী সেই জায়গা থেকেই ক্ষোভের কারণে এমন সিদ্ধান্ত সৌগতবাবুর?
যদিও সদ্যজয়ী সাংসদ এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে তিনি এটা পরিষ্কার করে বলেছেন যে সব মহিলা-ভোট তাঁর দল পায় নি। তাঁর মতে বস্তি থেকে শুরু করে গ্রামের মহিলারা ঘাসফুলে ঢেলে ভোট দিলেও, শহরাঞ্চলের বড় বড় আবাসনের মহিলারা, অর্থাৎ উচ্চবিত্ত মহিলারা কিন্তু তাদের সমর্থন করেননি এই লোকসভায়। যদিও তিনি নিজের রাজনৈতিক জীবনকে বিদায় জানানোর কারণের ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলেননি। কিন্তু মনে করা হচ্ছে বয়সের কারণে আবার নতুন করে প্রচারের দৌড়ঝাপ করতে চাইছেন না তিনি। ৫ বছর পর তার বয়সও আরও অনেকটাই বাড়বে। সেক্ষেত্রে শারীরিক কারণেই তখন সরে দাঁড়াতে চাইছেন সৌগত রায়। যদিও এর আগেও তিনি এরকম কথা বলেছিলেন নিজের ঘনিষ্ট মহলে। কিন্তু তাঁর পরেও এবারের ভোটে লড়েছেন তিনি।
বরাহনগরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তথা উত্তর কলকাতার লোকসভায় পরাজিত বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়কে নিয়েও মুখ খুলেছেন সৌগত। নিজেকে দলের থেকে বড় মনে করায় তাপসের এই পরিণতি বলেই মত তাঁর। তাপসের তৃণমূল ত্যাগের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বড় ভুল হয়েছে বলেই মত সৌগতবাবুর।
১৯৭৭ সালে প্রথম ভোটে দাড়িয়েছিলেন ব্যারাকপুর থেকে। কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন। তারপরে ২০০৯ এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের হয়ে আবারও সংসদের আঙিনায় পা রাখা। হয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রীও। সেই থেকে পরপর চারবার। এবার কী তাহলে সত্যিই সেই ট্র্যাডিশনে ইতি পড়তে চলেছে? সৌগত রায়ের নিজের বক্তব্যতে অন্তত সেরকমই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।