পুরসভায় ওয়ার্ড সভাপতির পদে বড় রদবদল, সংগঠনে নতুন নেতৃত্বে ভরসা তৃণমূল

কলকাতা: ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে সংগঠনকে নতুন করে সাজাতে বড় পদক্ষেপ নিল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বার থেকে পুরসভার কাউন্সিলররা (Councillors) নিজেদের…

কলকাতা: ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে সংগঠনকে নতুন করে সাজাতে বড় পদক্ষেপ নিল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বার থেকে পুরসভার কাউন্সিলররা (Councillors) নিজেদের ওয়ার্ডে সভাপতি হতে পারবেন না। অর্থাৎ, কাউন্সিলরের পদে থেকে একই সঙ্গে ওয়ার্ড সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দলীয় মহলে মনে করা হচ্ছে, এই নীতি মূলত সংগঠনকে আরও বিকেন্দ্রীকরণ করা ও নতুন নেতৃত্বকে সামনে আনার উদ্দেশেই নেওয়া হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা পুরসভা এবং রাজ্যের অন্যান্য পুরসভা এলাকায় এই নিয়ম কার্যকর হবে। ইতিমধ্যেই দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার জেলা নেতৃত্বকে বৈঠকের ডাক দিয়েছেন। তাঁর দপ্তরে আগামী সপ্তাহেই বৈঠক হবে, যেখানে বিধায়কদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেই বৈঠকে ওয়ার্ড সভাপতির জন্য নতুন নেতৃত্বের নাম নিয়ে আলোচনা হবে। দলের করা সমীক্ষা রিপোর্টও সেই বৈঠকে তুলে ধরা হবে।

   

তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, কাউন্সিলররা যদি একই সঙ্গে সভাপতি হন, তবে সংগঠনে একক প্রভাব তৈরি হয়। এতে সাধারণ কর্মীরা মতামত দেওয়ার সুযোগ কম পান। তাই দায়িত্ব আলাদা করে দিলে সংগঠনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় আরও বেশি মানুষ অংশ নিতে পারবেন। তবে একাংশ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, যদি কাউন্সিলরের স্ত্রী, স্বামী বা পরিবারের সদস্য সভাপতি হন, তাহলে নীতি কার্যত অকার্যকর হয়ে যাবে। সূত্রের খবর, এই ফাঁকফোকর আটকাতে স্থানীয় স্তরে অভিজ্ঞ নেতাদের সভাপতি করার পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রতিটি জেলার সংগঠনের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করা হয়েছে। মহালয়ার আগে একাধিক জেলা সংগঠনে টাউন ও ব্লক স্তরে নতুন সভাপতি বেছে নেওয়া হয়েছে। যুব, মহিলা ও শ্রমিক সংগঠনেও নতুন নেতৃত্ব আনা হয়েছে। সেই ঘোষণা শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছে তৃণমূল।

Advertisements

তৃণমূল কংগ্রেসের কৌশল স্পষ্ট—প্রথমে জেলা সংগঠনে রদবদল, তার পর পুরসভা এলাকায় কঠোর নীতি প্রয়োগ। কলকাতা পুরসভা এলাকায় ওয়ার্ড সভাপতি নির্বাচনকে ঘিরেই দলের এখন বিশেষ প্রস্তুতি চলছে। আগামী সপ্তাহে ওয়ার্ড সভাপতি, কাউন্সিলর ও বিধায়কদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক হবে বলে জানা গিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৃণমূল কংগ্রেস আসলে স্থানীয় সংগঠনে প্রভাবশালী নেতাদের একক আধিপত্য ভাঙতে চাইছে। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বকে সামনে আনার মাধ্যমে ভোটের আগে সংগঠনের ভিত আরও মজবুত করার চেষ্টা চলছে। এতে একদিকে দলীয় কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়বে, অন্যদিকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও তৃণমূল কংগ্রেস শক্তিশালী অবস্থানে যাবে।

তৃণমূলের এই পদক্ষেপ শুধু রাজনৈতিক কৌশল নয়, এটি আসলে সংগঠন চালনার নতুন পদ্ধতি বলেই মনে করা হচ্ছে। কলকাতা ও অন্যান্য পুরসভা এলাকায় এটি কতটা কার্যকর হয়, এখন সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।