ধনখড়কে ইস্তফার হুমকি? বিস্ফোরক দাবি তৃণমূল সাংসদের

সম্প্রতি রাজ্য এবং জাতীয় রাজনীতিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়ের একটি বিস্ফোরক মন্তব্য ঘিরে। তাঁর দাবি, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়কে চাপ দিয়ে ইস্তফা দেওয়ার হুমকি…

Jagdeep Dhankhar: India’s Vice President Admitted to Hospital with Chest Pain

সম্প্রতি রাজ্য এবং জাতীয় রাজনীতিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়ের একটি বিস্ফোরক মন্তব্য ঘিরে। তাঁর দাবি, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়কে চাপ দিয়ে ইস্তফা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, তাঁকে জানানো হয়েছিল, যদি তিনি নির্ধারিত সময়—রাত ৯টার মধ্যে পদত্যাগ না করেন, তবে পরদিন সংসদে তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন পড়েছে। তৃণমূল সাংসদ নাম না করে কেন্দ্রের শীর্ষ নেতৃত্বের দিকে আঙুল তুলেছেন। তিনি বলেন, “দেশের ইতিহাসে এরকম নজিরবিহীন হুমকির ঘটনা বিরল। একজন নির্বাচিত উপরাষ্ট্রপতিকে যদি এইভাবে চাপে ফেলে পদত্যাগে বাধ্য করার চেষ্টা হয়, তাহলে গণতন্ত্র কোথায় দাঁড়াবে?”

   

তাঁর আরও অভিযোগ, “এই ঘটনা আমাদের সাংবিধানিক কাঠামোর উপর সরাসরি আঘাত। উপরাষ্ট্রপতি, যিনি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্বে থাকেন, তাঁকে অপদস্থ করার চেষ্টা হয়েছে। যদি কোনও মতপার্থক্য থাকে, তাহলে তা আলোচনার মাধ্যমে মেটানো উচিত। কিন্তু হুমকি দিয়ে পদত্যাগ আদায় করা একেবারেই অগণতান্ত্রিক।”

যদিও এখনও পর্যন্ত উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়ের তরফে এই বিষয়ে সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তিনি আগেও বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সেতুবন্ধনের ভূমিকা পালন করেছেন। উপরাষ্ট্রপতির পদ অলঙ্কৃত করার পর থেকে তিনি বেশ কিছু বিতর্কিত বিষয়েও মুখ খুলেছেন, বিশেষত সংসদে বিরোধী দলগুলির ভূমিকা নিয়ে।

তবে এই অভিযোগ ঘিরে তৃণমূল কংগ্রেসও সরব হয়েছে। দলের মুখপাত্র বলেন, “যদি একজন উপরাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রেও এমন আচরণ হয়, তাহলে সাধারণ সাংসদ বা বিরোধীদের অবস্থা তো সহজেই কল্পনা করা যায়। দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে পঙ্গু করে ফেলার এই চেষ্টা বন্ধ হওয়া উচিত।”

এদিকে, বিজেপি শিবির এই অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। দলের মুখপাত্র বলেন, “তৃণমূলের সাংসদরা বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। উপরাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় কোনও সিদ্ধান্ত নিলে তা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে হুমকি বা চাপে ফেলার কিছু নেই।”

Advertisements

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, যদি এই অভিযোগ সত্যি হয়, তাহলে তা সাংবিধানিক রাজনীতির জন্য গভীর আশঙ্কার বার্তা বহন করে। একজন উপরাষ্ট্রপতি সাংবিধানিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। তাঁর প্রতি এমন আচরণ দেশের সংবিধান ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য একটি বড় আঘাত হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ইমপিচমেন্ট একটি জটিল প্রক্রিয়া। সেটি কখনও হঠাৎ করে শুরু করা সম্ভব নয়। সেখানে সংসদের দুই কক্ষের একাংশের পূর্ণ সমর্থন প্রয়োজন। ফলে ‘রাত ৯টার মধ্যে পদত্যাগ না করলে ইমপিচ করা হবে’—এই ভাষা নিজেই ইঙ্গিত দেয়, ঘটনাটি কতটা চাপ সৃষ্টিমূলক হতে পারে।

তবে এখনই এই ইস্যুতে নিশ্চিত কিছু বলা কঠিন, কারণ উপরাষ্ট্রপতির নিজের বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক মহল অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ধনখড় কী বলেন, তিনি সত্যিই কোনও চাপের মুখে ইস্তফা দিচ্ছেন কি না, বা আদৌ এমন কোনও হুমকি পেয়েছেন কি না।

এমন এক স্পর্শকাতর অভিযোগ সামনে আসায় দেশজুড়ে নতুন করে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ, সাংবিধানিক ভারসাম্য ও রাজনৈতিক শালীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আগামী দিনে এই বিতর্ক কতদূর গড়ায়, সেটাই এখন দেখার।