বাংলার রাজনীতিতে গত কিছু দিন ধরে তীব্র উত্তেজনা চলছে। বিশেষত, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে ভুয়ো ভোটারের মাধ্যমে নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে, তা এখন জাতীয় রাজনীতিতেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বিজেপির সরাসরি সহায়তায় নির্বাচন কমিশন ভুয়ো ভোটারের একটি সুনির্দিষ্ট হিসাব তৈরি করছে, যা নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। বাংলার রাজনীতিতে ইতিমধ্যেই এই অভিযোগে উত্তেজনা বেড়েছে। তবে এবার তৃণমূল কংগ্রেস সেই অভিযোগকে জাতীয় স্তরে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে।
দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে তৃণমূল কংগ্রেসের এক সাংবাদিক বৈঠকে এই বিষয়টি সামনে আনা হবে, যেখানে উপস্থিত থাকবেন সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, সাগরিকা ঘোষ এবং কীর্তি আজাদ। তাঁদের মূল উদ্দেশ্য, তৃণমূলের অভিযোগ যে ভুয়ো ভোটার নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে, তা নিয়ে জাতীয় স্তরে আরও আলোচনা শুরু করা এবং এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করা।
এতদিন ধরে বাংলার রাজনীতিতে ভুয়ো ভোটারের অভিযোগ ছিল, কিন্তু এবার তৃণমূল কংগ্রেস তা জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এর আগে, দিল্লি নির্বাচনের ফল প্রকাশের একদিন আগে, কনস্টিটিউশন ক্লাবে রাহুল গান্ধী মহারাষ্ট্রে ভুয়ো ভোটার নিয়ে সরাসরি অভিযোগ তুলেছিলেন। একই ভাবে, তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও দিল্লিতে ভুয়ো ভোটারের অভিযোগ তুলেছিলেন, এবং তারপরে আম আদমি পার্টির হারের জন্য এই বিষয়কেই দায়ী করেছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে বিরোধী দলগুলোর অন্যতম বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছে ভুয়ো ভোটার ইস্যু। তৃণমূল কংগ্রেস এখন জাতীয় রাজনীতিতে এই ইস্যু নিয়ে যথেষ্ট জোরদার পদক্ষেপ নিতে চায়। তৃণমূলের লক্ষ্য, ভুয়ো ভোটার নিয়ে যে অভিযোগ তাঁরা তুলছেন, তা একাধিক রাজ্যে এবং দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হোক এবং এই বিষয়ে জাতীয় নির্বাচনে আরও সচেতনতা তৈরি হোক।
তবে তৃণমূলের এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনও একটি বিবৃতি জারি করেছে। রবিবার কমিশন জানিয়েছে, দুটি আলাদা রাজ্যে একই এপিক নম্বরের ভোটার কার্ড থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে যদি কোনও মিল থাকে, তবে সেই ব্যক্তি ভুয়ো ভোটার নন। কমিশনের মতে, এ ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত ত্রুটি হতে পারে এবং এটি কোনোভাবেই নির্বাচনী জালিয়াতির প্রমাণ নয়।
তৃণমূল কংগ্রেসের এই অভিযোগ নিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের বিবৃতি, দুই পক্ষের মধ্যে আরও বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। কিছু রাজনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, কমিশনের বিবৃতি ইস্যুটিকে শান্ত করার চেষ্টা হতে পারে, কিন্তু বিরোধীদের পক্ষ থেকে এপিক (Electoral Photo Identity Card) এবং ভুয়ো ভোটারকে কেন্দ্র করে যে দাবি তোলা হচ্ছে, তা সঠিক তদন্তের দাবি রাখে।
তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা নিশ্চিত যে, এ ধরনের তদন্ত এবং ইস্যু সামনে আনার মাধ্যমে তাঁরা আগামী জাতীয় নির্বাচনে আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাতে পারবেন। তবে সময়ের সাথে সাথে বিষয়টি আরও জটিল হতে পারে, এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আশা করছেন, সামনে আরও বিতর্কিত বিষয় সামনে আসতে পারে।
এদিকে, এই ইস্যুতে দলের পক্ষ থেকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্রিয়তা আরও বাড়ানো হয়েছে। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় স্তরের রাজনীতিতে এটি কেমন প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে।