অভিষেকের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে কল্যাণ, বরফ কি গলল?

দলীয় অন্দরের চাপানউতোরের মধ্যেই অবশেষে বহুচর্চিত বৈঠকটি হল। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানী দিল্লিতে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে (Abhishek-Kalyan Meeting) দীর্ঘ সময় ধরে…

TMC’s Abhishek Banerjee Holds Key Meeting with MP Kalyan Banerjee in Delhi

দলীয় অন্দরের চাপানউতোরের মধ্যেই অবশেষে বহুচর্চিত বৈঠকটি হল। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানী দিল্লিতে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে (Abhishek-Kalyan Meeting) দীর্ঘ সময় ধরে বৈঠকে বসলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় ধরে চলা এই সাক্ষাৎ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।

বৈঠকের (Abhishek-Kalyan Meeting) পর কেউ বিশেষ কিছু না বললেও, কল্যাণের মুখ থেকে শোনা গেল একটিই মন্তব্য— “খুব ভাল আলোচনা হয়েছে।” কিন্তু এই এক পঙক্তির উত্তরে লুকিয়ে রয়েছে বহু প্রশ্ন, বহু জল্পনার ইন্ধন।

   

গত কয়েক মাস ধরেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের দূরত্ব (Abhishek-Kalyan Meeting) স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। কখনও দলীয় কর্মসূচিতে তাঁর অনুপস্থিতি, কখনও প্রকাশ্যেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে কটাক্ষ— সব মিলিয়ে কল্যাণ যেন একরকম ‘দূরত্বে’ ছিলেন দলের কেন্দ্রবিন্দু থেকে। বিশেষ করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে চর্চা কম হয়নি।

শুধু তাই নয়, লোকসভা নির্বাচনের সময়েও কল্যাণকে প্রার্থী করা হবে কি না, তা নিয়ে দোলাচল তৈরি হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি টিকিট পেয়েই ভোটে লড়েন এবং জয়ীও হন। কিন্তু তাতেও সম্পর্কের বরফ বিশেষ গলেছে বলে মনে করা হয়নি। বরং দিল্লিতে সংসদ চলাকালীন সময়েও তাঁকে তৃণমূলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও মঞ্চে অনুপস্থিত দেখা গিয়েছিল।

এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতের এই বৈঠক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সূত্রের খবর, এই বৈঠক পূর্বনির্ধারিত ছিল এবং দু’জনেই জানতেন যে আলোচনা হবে মুখোমুখি। অভিষেকের তরফ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল কথা বলার আগ্রহ রয়েছে। কল্যাণও সেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। অবশেষে বাস্তব হল সেই সম্ভাবনা।

Advertisements

তবে কী নিয়ে কথা হল, তা কেউ স্পষ্ট করে বলেননি। দলের অন্দরের একাংশের মতে, এদিনের আলোচনায় উঠে এসেছে পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি, সাংগঠনিক প্রশ্ন, দলীয় শৃঙ্খলা এবং ভবিষ্যতের করণীয়। অনেকে মনে করছেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং তার আগে দলকে আরও সংহত করার লক্ষ্যে এই আলোচনা এক ধরণের ‘পাথর সরানো’র চেষ্টা।

তৃণমূল সূত্রে আরও জানা যাচ্ছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব চায় না কোনও জনপ্রিয় বা অভিজ্ঞ সাংসদ দলে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ুন। সে দিক থেকেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজন আইনজীবী ও প্রবীণ সাংসদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাটা প্রয়োজনীয় বলে মনে করছে দল। আবার কল্যাণ নিজেও চাইছেন, নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে আরও সংহত ও শক্তিশালী করে তুলতে। এই দু’টি দৃষ্টিভঙ্গিই এক জায়গায় এসে মেলানোর চেষ্টাই সম্ভবত বৃহস্পতিবারের বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল।

এখন দেখার বিষয়, এই আলোচনার ফল কতটা সুদূরপ্রসারী হয়। দলের অভ্যন্তরেও অনেকে মনে করছেন, এটি শুধু একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, বরং ভবিষ্যতের একটি সুরাহার ইঙ্গিত। রাজ্য রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এই ধরণের আলোচনার গুরুত্ব অনেক, বিশেষত যখন বিরোধীরা তৃণমূলের ভাঙন বা অস্থিরতা নিয়ে লাগাতার প্রচার চালাচ্ছে।

সব মিলিয়ে, কল্যাণ-অভিষেক বৈঠক তৃণমূলের অন্দরে এক নতুন সূচনার ইঙ্গিত হতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে। এখন অপেক্ষা— এই বরফ কতটা গলল, তা আগামী দিনে প্রকাশ্যে আসে কি না।