ধর্মতলার ভিড়ে জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “২১-এর আগে বলেছিলাম খেলা হবে, আজ বলছি পদ্মফুল উপড়ে ফেলতে হবে।” তাঁর কণ্ঠে ছিল আক্রমণাত্মক দৃঢ়তা, আর বক্তব্যে ফুটে উঠল বাংলা ও বাঙালির আত্মমর্যাদার প্রশ্ন।
মমতা বলেন, বিজেপি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে বারবার অপমান করেছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “বাঙালি বাংলায় কথা বললেই বলে বাংলাদেশি? মাছ খাওয়া নিয়ে ব্যাঙ্গ করে?” তাঁর মতে, এটি এক গভীর বাঙালিত্ববিরোধী মনোভাবের প্রতিফলন। মমতা জানিয়ে দেন, “আমরা দরকারে পার্লামেন্টে বাংলায় কথা বলব, দেখি কার গায়ে জ্বালা ধরে।” বাংলা নিয়ে যাঁরা বিদ্বেষ ছড়াতে চান, তাঁদের উদ্দেশে বলেন, “তোমাদের কথায় বাংলার মানুষ উঠবে বসবে? গলা কেটে দিলেও জয় বাংলা বেরোবে।”
অপরদিকে, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপিকে তুলোধোনা করেন। তিনি বলেন, “বিজেপি একদিকে ইডিকে লাগাচ্ছে, অন্যদিকে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিচ্ছে।” অভিষেক স্পষ্ট করে দেন, “আমরা বৈষম্যে বিশ্বাসী নই। আমাদের এই মাটিতে দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ছটপুজো—সব কিছু হয়। এই বাংলায় আঁচড় কেটে অশান্ত করা যাবে না। আগুন নিয়ে যে খেলবে, সে নিজেই জ্বলে ছারখার হয়ে যাবে। এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া হবে না।”
তিনি বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ তুলে বলেন, “আমরা কোনওদিন প্রতিহিংসার রাজনীতি করিনি। বিজেপি যেখানে জিতেছে, সেখানেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রূপশ্রী, কন্যাশ্রী বন্ধ করেননি। ওরা মানুষকে বিভাজন করে, আমরা করি না।” তাঁর মতে, ২০২৬-এর আগে দেশের সমস্ত ভোটারকে বুঝিয়ে দিতে হবে—বাংলার মাটি ভাগাভাগির রাজনীতি সহ্য করবে না। তিনি তৃণমূল কর্মীদের আহ্বান জানান, “ছাব্বিশে ওদের শূন্য করতে হবে।”
এই ভাষণগুলির মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট, আগামী লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেস আবারও বাঙালি আবেগ, ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় সহাবস্থানের প্রশ্নকে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে তুলে আনতে চায়। বিজেপির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীকরণ, প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ এবং বাংলা বিদ্বেষের অভিযোগ তুলে তাঁরা জনমানসে জায়গা করে নিতে চাইছে।
শহিদ দিবসের এই সভা ছিল শুধুমাত্র অতীতের শহিদদের স্মরণ নয়, বরং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক লড়াইয়ের রূপরেখা ঘোষণা। বাংলার মাটি থেকে এক স্বর উঠে এল—বাঙালিকে হেয় করলে জবাব পাবে, ধর্মের নামে বিভাজন করলে প্রতিরোধ হবে। রাজনীতির ময়দানে ‘খেলা’ যে ফের শুরু হয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।