পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুরের পর এবার কলকাতার যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল কলেজে তীব্র অশান্তির সৃষ্টি হলো। এই ঘটনাটি ঘটেছে কলেজের গভর্নিং বডি-র বৈঠকের সময়, যখন তৃণমূল সাংসদ মালা রায় কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। অভিযোগ উঠেছে, কলেজের ছাত্র সংসদ তথা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে এই অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, মালা রায় গভর্নিং বডি-র প্রেসিডেন্ট হিসেবে বৈঠকে অংশ নিতে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। কিন্তু তাঁর গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশের পরেই, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একদল ছাত্র তার গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করে। মালার গাড়ির চারপাশে চলতে থাকে তীব্র বিক্ষোভ, এবং পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এ ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবে পুলিশকে লক্ষ্য করে একদল ছাত্র আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে, এবং এক পর্যায়ে পুলিশদের সঙ্গে বচসাও বাধে। পুলিশের দাবি, কিছু বহিরাগত ছাত্র ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে গোলমাল সৃষ্টি করেছে, যা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করেছে।
মালা রায় নিজে বলেন, “এমন কিছু ঘটেছে, তবে আমি পুরোপুরি জানি না। কলেজ কর্তৃপক্ষ এর বিষয়ে বেশি কিছু বলতে পারবেন।” যদিও মালা তার নিজের বক্তব্যে পুরো ঘটনা সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু বলেননি, তবে তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন।
এই ঘটনায় ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে, এবং অভিযোগ উঠছে যে বহিরাগত ছাত্ররা কিছু একটা উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে ঢুকে গোলমাল শুরু করেছে। একদিকে যেখানে কলেজের পড়ুয়া একটি অংশ শান্তিপূর্ণভাবে ক্লাস করতে চাইছিল, সেখানে অন্যদল বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে আবির খেলতে শুরু করে, যা শিক্ষার্থীদের কাছে বিরক্তিকর হয়ে ওঠে।
এই ঘটনায় ১৫ মার্চ পর্যন্ত কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাদের মতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধ রাখা নিরাপদ সিদ্ধান্ত হবে। এর পাশাপাশি, কলেজে অশান্তির সৃষ্টির জন্য বহিরাগত ছাত্রদের অভিযুক্ত করা হচ্ছে, যাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি ছিল না।
কোনও এক কলেজ ছাত্র অভিযোগ করেন, “আজ গভর্নিং বডি-র মিটিং ছিল, মালা রায় এসেছিলেন, মিটিংও শুরু হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে ঢুকে আবির খেলতে শুরু করে। এটা আমাদের সঙ্গে সশস্ত্র আক্রমণ করার উদ্দেশ্য ছিল।”
এই পরিস্থিতি কলেজের শিক্ষার্থী এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর এবং সংকটজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরো ক্যাম্পাসে আতঙ্ক এবং অসন্তোষের পরিবেশ বিরাজ করছে। যেহেতু এই ধরনের বিক্ষোভ একাধিক সময় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং শিক্ষার পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাই কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবার চেষ্টা করছে।
মালার গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ এবং কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরে গোলমাল সৃষ্টির ঘটনা কলেজের ইতিহাসে একটি বিরল ও অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যা রাজনৈতিক এবং শিক্ষাগত দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।