একুশে জুলাই সমাবেশের (TMC Shahid Diwas) আগে কেষ্ট দর্শনে ভিড়! সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল ছবিতে দেখা যাচ্ছে, অনুব্রত মন্ডল (কেষ্ট) সমাবেশ স্থলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাকে দেখেই দলীয় সমর্থকরা উল্লসিত। উল্লেখ্য টেলিফোনে পুলিশ অফিসারের অশ্লীল ভাষায় হুমকি দেওয়ায় অভিযুক্ত বীরভূম জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন স়হাপতি কেষ্ট। তিনি গরু পাচার মামলার তিহার জেলে ছিলেন। কেষ্ট বুক ফুলিয়ে ঘুরেছেন। তিনি মূল সমাবেশস্থলের চারপাশ দেখেন। সোমবার তিনি মঞ্চে থাকবেন নাকি ভিভিআইপি দর্শকাশনে বসবেন তা নিয়ে তীব্র জল্পনা।
কেষ্টর রাজনৈতিক প্রভাব এবং শহিদ দিবসে অংশগ্রহণ
অনুব্রত মণ্ডল বীরভূমে টিএমসি’র একজন প্রভাবশালী নেতা। তিনি ২০১১ সাল থেকে দলের নির্বাচনী সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ২০২২ সালে গরু পাচার মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি ২৫ মাস তিহার জেলে ছিলেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর বীরভূমে তাঁকে ‘বাঘ’ হিসেবে স্বাগত জানানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের অন্যান্য নেতারা তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন, যদিও দলের অভ্যন্তরীণ কলহ এবং তাঁর একচ্ছত্র শাসনের শৈলী নিয়ে অসন্তোষের কথাও উঠে এসেছে।
২০২৫ সালের শহিদ দিবসে মণ্ডল মঞ্চে থাকবেন নাকি ভিভিআইপি দর্শকাসনে বসবেন, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। তাঁর উপস্থিতি এবং সমর্থকদের উৎসাহ সত্ত্বেও, ধর্ষণের হুমকি বিতর্ক তাঁর ইমেজের উপর প্রভাব ফেলেছে। দলের অভ্যন্তরে কেউ কেউ মনে করছেন, তাঁর এই ধরনের আচরণ দলের জন্য বিব্রতকর। তবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন এবং তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে মণ্ডল এখনও বীরভূমে একটি শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব।
শহিদ দিবসের বিতর্ক এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
শহিদ দিবসের তাৎপর্য শুধুমাত্র টিএমসি’র জন্য নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক যাত্রার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৩ সালের ঘটনা, যখন তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়, তা মমতার জন্য জনসমর্থন বাড়িয়েছিল। তিনি এই ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেন এবং বামফ্রন্টের দীর্ঘ শাসনের অবসান ঘটান। তবে, সিপিআই(এম) দাবি করে যে ১৯৯৩ সালে মিছিলে নাশকতা এবং হামলার প্রচেষ্টা ছিল, এবং পুলিশকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল। মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই ঘটনার তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করেন, যা পুলিশের পদক্ষেপকে ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘অসাংবিধানিক’ বলে উল্লেখ করে। তবে, তৎকালীন কোনো বাম নেতা বা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন
অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হলেও, পুলিশের তরফে আরও কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। বিজেপি এবং এনসিডব্লিউ মনে করে যে এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রমাণ। মণ্ডলের রাজনৈতিক প্রভাব এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনের কারণে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
২০২৫ সালের শহিদ দিবসের সমাবেশ টিএমসি’র জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট হলেও, অনুব্রত মণ্ডলের বিতর্ক এই সমাবেশের উৎসাহকে কিছুটা ম্লান করেছে। তাঁর ধর্ষণের হুমকি এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে উঠে আসা প্রশ্নগুলি দলের ইমেজের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, মণ্ডলের সমর্থকদের উৎসাহ এবং তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব বীরভূমে টিএমসি’র শক্তি প্রদর্শন করে। শহিদ দিবসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কীভাবে এই বিতর্ক মোকাবিলা করেন এবং দলের ভবিষ্যৎ রোডম্যাপ ঘোষণা করেন, তা নিয়ে সকলের নজর থাকবে।