সিপিকেও ‘গ্রেফতারের’ দাবি সুখেন্দুশেখরের! দলের মধ্যেই ক্রমশ কোনঠাসা মমতা?

আর জি কর (R G Kar) কান্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিড়ম্বনা যেন শেষ হচ্ছেই না। শান্তনু সেন, কুনাল ঘোষ, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের পর এবার আবার সুখেন্দুশেখর…

Sukhendu Shekhar Roy demands arrest of Kolkata CP & ex principal Sandip ghosh.

আর জি কর (R G Kar) কান্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিড়ম্বনা যেন শেষ হচ্ছেই না। শান্তনু সেন, কুনাল ঘোষ, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের পর এবার আবার সুখেন্দুশেখর রায় (R G Kar) । কার্যত ঘুরিয়ে মমতার বিরুদ্ধে সরব হলেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ (R G Kar) ।

আর জি কর কাণ্ডে প্রথম থেকেই সোচ্চার ছিলেন সুখেন্দুশেখর। ১৪ই জুলাইয়ের মধ্যরাত্রে মহিলাদের রাত দখলের ডাকে তিনিও পথে নামবেন বলে ঘোষণা আগেই করে দিয়েছিলেন। খুন এবং ধর্ষণ কাণ্ডের বিরুদ্ধে তাঁর বক্তব্য ছিল বরাবরই সুস্পষ্ট। কার্যত তাঁর দলের ঘোষিত লাইনের সঙ্গে তার বক্তব্যের ৩৬০ ডিগ্রি ব্যবধান বরাবরই লক্ষ্য করা গিয়েছে। এবার আরও একধাপ এগিয়ে সুখেন্দুশেখর বড়সড় দাবি জানালেন। তাঁর দাবি এবার সরাসরি সিবিআই-এর কাছেই।

   

আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের পাশাপাশি কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলেরও গ্রেফতারীর দাবী জানিয়েছেন তিনি। তার এই বক্তব্যে কার্যত কলকাতা পুলিশের তদন্তে ব্যর্থতা এবং অপদার্থতার অভিযোগকেই পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। কী বলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার এই সাংসদ?

‘ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে…’, আরজি করের ধর্ষণ প্রসঙ্গে ‘ইউ-টার্ন’ সৌরভের

নিজের ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে এই বিষয়ে একটি পোস্ট করেছেন সুখেন্দু শেখরবাবু। সেখানে তিনি বলছেন, “সিবিআইকে স্বচ্ছভাবে তদন্ত করতে হবে। প্রাক্তন অধ্যক্ষের পাশাপাশি সিপিকেও প্রয়োজনে গ্রেফতার করা উচিত। কে আত্মহত্যার তত্ত্ব প্রথম রটিয়েছিল? কেন হলের দেওয়াল ভাঙ্গা হলো? কে ‘রায়’-কে এত ক্ষমতা দিল? কেন ঘটনার তিনদিন পর ঘটনাস্থলে স্নিফার ডগ এনে তদন্ত শুরু হল! এরকম শয়ে শয়ে প্রশ্ন আছে। তাদের কাছে উত্তর চাওয়া হোক।”

এর আগেই সুখেন্দুশেখরবাবু বলেছিলেন, যে তাঁর বাড়িতে মেয়ে আছে, ছোট ছোট নাতনি আছে। নিজের প্রাণ চলে গেলেও এই গোটা ঘটনার বিরোধিতা তিনি করবেনই। কার্যত নিজের সেদিনের বক্তব্যে অনড়ই রইলেন তৃণমূলের এই বর্ষীয়ান সাংসদ। এর আগেই শান্তনু সেন গোটা ঘটনায় আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। প্রাক্তন অধ্যক্ষকে নিয়ে একাধিক গুরুতর অভিযোগ করেছেন তিনি। তার জন্য দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে শাস্তির মুখে পড়েছেন শান্তনু। হারাতে হয়েছে দলীয় মুখপাত্রের পদ। সঙ্গে শান্তনুর কলকাতা কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদও গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে।

ভুল শুধরানোর বার্তা, সামনে চাইলেন অভিষেককে, কুণালের পোষ্টে কীসের ইঙ্গিত?

এবার কী সুখেন্দুশেখরকেও একই রকম শাস্তিমূলক পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে হবে? অপরদিকে ১৪ তারিখের রাত্রে আর জি কর চত্বরে রীতিমতন ধুন্ধুমার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থলে এসে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল কার্যত সংবাদ মাধ্যমের উপরেই সমস্ত দায় চাপিয়ে দেন। তদন্তের একাধিক ক্ষেত্র নিয়ে মিসলিড করা হচ্ছে, জনগণকে ভুল তথ্য জানানো হচ্ছে, এমন অভিযোগ তিনি করেন।

কিন্তু এবার খোদ তৃণমূলেরই সাংসদ এর মুখে সেই একই তথ্য উঠে আসছে। যা নিয়ে কার্যত তীব্র বিড়ম্বনার মুখে রাজ্যের প্রশাসন। প্রসঙ্গত রাজ্যের স্বাস্থ্য এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক দুটোই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। একদিকে আরজি করের অধ্যক্ষ এবং অপরদিকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার, দুইজনেরই গ্রেফতারি দাবি তুলেছেন সুখেন্দুশেখর।

তাহলে কি কার্যত তিনি তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে দিলেন? দলের মধ্যে সুখেন্দুশেখর মমতাপন্থী বলেই পরিচিত। কিন্তু আরজিকর ঘটনার প্রথম লগ্ন থেকেই তিনি বরাবরই উল্টো সুরে গিয়েছেন। এমনকি এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে কুনাল ঘোষ কিংবা আরও এক বর্ষীয়ান বিধায়ক তথা বিধানসভার মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মুখেও ‘মমতাকে মিসলিড’ করার তত্ত্ব শোনা যাচ্ছে।

আর জি কর ইস্যুতে কী তাহলে দলের মধ্যে ক্রমশ জমি হারাচ্ছেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমোই? যেভাবে মমতার বিরুদ্ধে একের পর এক নেতা আকার ইঙ্গিতে মুখ খুলছেন, সম্ভাবনাই ক্রমশ প্রবল হচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।