রবিবার ধর্মতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবসের সভা ছিল একদিকে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার জায়গা, অন্যদিকে ছিল আবেগের বহিঃপ্রকাশ। প্রতিবছরের মতো এবারও শহিদ দিবসে ধর্মতলার রাজপথে ঢল নামে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের। কিন্তু এই সভা ঘিরে একটি ঘটনাই দিনভর রাজনৈতিক চর্চার কেন্দ্রে রইল — অনুব্রত মণ্ডলকে সভাস্থলের মূল মঞ্চে ঢুকতে না দেওয়া এবং তার ফলে ‘দিদি’-র সঙ্গে দেখা না হওয়া।
গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতারির পর দীর্ঘ সময় জেলে ছিলেন তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল। দলীয় নেতাদের একাংশ যখন তাঁর পাশে দাঁড়াতে ইতস্তত করেছিলেন, তখনও তাঁকে নিঃশর্ত সমর্থন জানিয়ে পাশে ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কেষ্ট’ বলে পরিচিত অনুব্রতের প্রতি দিদির সেই আস্থা দলের অভ্যন্তরেও ছিল আলোচনার বিষয়।
জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর এটাই ছিল অনুব্রতের প্রথম শহিদ দিবসের সমাবেশে যোগদান। রবিবার দুপুরে বীরভূম থেকে তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে ধর্মতলায় পৌঁছন অনুব্রত। কিন্তু মূল মঞ্চে ওঠার আগেই তাঁকে আটকে দেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা। মঞ্চের প্রবেশপথে ব্যারিকেডে দাঁড়িয়ে অনুব্রতের গাড়ি আটকে দেওয়া হয় বলে খবর। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তাঁকে অপেক্ষা করতে বলা হয়। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর অবশেষে তিনি স্থান ত্যাগ করেন।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে তৈরি হয়েছে নানা জল্পনা। অনেকের মতে, এটি নিছকই নিরাপত্তা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। আবার কেউ কেউ বলছেন, অনুব্রতের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা রয়েছে। যদিও এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বা পুলিশের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
অনুব্রতের মঞ্চে না ওঠার প্রভাব আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে কিছুক্ষণ পরে। তিনি সভাস্থল ত্যাগ করার ঠিক এক ঘণ্টা পর সভায় আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে বহুল প্রতীক্ষিত ‘কেষ্ট’–‘দিদি’ মুখোমুখি সাক্ষাৎ আর হয়ে উঠল না।
বিষয়টি ঘিরে প্রশ্ন উঠছে, ইচ্ছাকৃতভাবে কি তাঁদের দেখা এড়ানো হল? না কি সবটাই ঘটেছে সময় ও পরিস্থিতির অনুকূলে না থাকার জন্য? রাজনীতির কারবারিরা জানেন, এমন দিনে এমন ঘটনার নেপথ্যে অনেক সময় থাকে অপ্রকাশিত বার্তা।
তবে অনুব্রতের দল ছাড়ার কোনও ইঙ্গিত নেই এখনই। সভাস্থল ছেড়ে যাওয়ার পর তিনি কোনও ক্ষোভ বা অভিযোগ প্রকাশ করেননি। শান্তভাবে তিনি গাড়িতে চেপে ধর্মতলা ছাড়েন। দলীয় অনুগামীদের মধ্যেও উত্তেজনা ছড়ালেও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এই ঘটনা ভবিষ্যতে অনুব্রত মণ্ডলের রাজনৈতিক পরিচিতি ও গুরুত্বকে কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা এখনই বলা মুশকিল। তবে একথা বলা যায়, অনুব্রতকে ঘিরে দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখনও শীতল হয়নি। মঞ্চে জায়গা না পাওয়ার ঘটনা হঠাৎ বা কাকতালীয় নয় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
একদিকে অনুব্রতের আগমন, অন্যদিকে দিদির দেরিতে প্রবেশ—এই সমান্তরাল ঘটনাগুলি ইঙ্গিত দিচ্ছে, তৃণমূলের অভ্যন্তরে এখনও অনেক কিছু ‘অপ্রকাশিত’। শহিদ দিবসের আবেগঘন আবহেও এই ছোট্ট দৃশ্যপট দলীয় রাজনীতির গভীর সঙ্কেত বহন করে বলে অনেকের মত।
এখন দেখার, অনুব্রতের পরবর্তী রাজনৈতিক গতিপথ কী রূপ নেয়, এবং দিদি তাঁকে আদৌ ভবিষ্যতে আবারও মঞ্চে স্থান দেন কি না।