সল্টলেকে বাসের রেষারেষিতে প্রাণ গেল তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রের, বিক্ষোভের মুখে পুলিশ

বেহালা, বাঁশদ্রোণীর পর এবার সল্টলেকে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক স্কুল পড়ুয়ার। সল্টলেকের (Saltlake Road Accident) ২ নম্বর গেটের সামনে সল্টলেক-হাওড়া রুটের একটি বাসের ধাক্কায়…

Third-Grade Student Dies in Bus Race in Saltlake Road Accident, Police Face Protest

বেহালা, বাঁশদ্রোণীর পর এবার সল্টলেকে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক স্কুল পড়ুয়ার। সল্টলেকের (Saltlake Road Accident) ২ নম্বর গেটের সামনে সল্টলেক-হাওড়া রুটের একটি বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হল এক স্কুল পড়ুয়ার। মঙ্গলবার সল্টলেকে দু’টি বাসের রেষারেষির জেরে প্রাণ কাড়ল তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রের। স্কুটিতে মায়ের সঙ্গে স্কুল থেকে ফিরছিল শিশুটি।

ধাক্কায় স্কুটি থেকে পড়ে যায় সে এবং আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনাটি ঘটার পর স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ দফায় দফায় আলোচনা করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। বিক্ষোভকারীরা বাস ভাঙচুরও করেন।

   

এই দুর্ঘটনায় রাজ্যজুড়ে শোকের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে কারণ এর আগেও একই ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিল একাধিক স্কুলপড়ুয়া। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে সল্টলেকের ২ নম্বর গেটের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রটি তার মায়ের সঙ্গে স্কুটিতে চেপে স্কুল থেকে ফিরছিলেন। সেই সময় সল্টলেকের রাস্তায় দুটি বাসের রেষারেষি চলছিল। সেই মুহূর্তে একটি বাস শিশুটিকে ধাক্কা মারে, যার ফলে সে স্কুটি থেকে পড়ে যায়।

শিশুটির মাথায় আঘাত লাগে এবং গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও শিশুটির মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনা ঘটার পরই সল্টলেকের স্থানীয়রা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, রাস্তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিক নয় এবং বাসের রেষারেষি চলতে থাকার ফলে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। স্থানীয়দের ক্ষোভ এতটাই তীব্র ছিল যে, তারা বাসে ভাঙচুরও চালায়।

প্রসঙ্গত, এটিই প্রথম নয় এর আগেও কলকাতায় এই ধরনের দুর্ঘটনায় স্কুলপড়ুয়াদের প্রাণহানি ঘটেছে। গত অক্টোবর মাসে বাঁশদ্রোণির এক ছাত্রকে একটি জেসিবি গাড়ি ধাক্কা দেয়, যখন সে কোচিং সেন্টারে যাচ্ছিল। জেসিবির ধাক্কায় মাথায় চোট পেয়ে আহত ওই ছাত্রকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তখনও স্থানীয়রা রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এছাড়া, গত বছরের অগস্টে বেহালায়ও একই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে।

সেখানেও এক ছাত্রকে লরি ধাক্কা দেয়, যার ফলে তার মৃত্যু হয়। নিহত ছাত্রের বাবা আহত হন এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দুর্ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় এবং সরকারি বাসে ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে হয় এবং পাথরের আঘাতে কয়েকজন পুলিশ কর্মীও আহত হন। প্রায় চার ঘণ্টা পর ওই ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

এই ধরনের দুর্ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক, বিশেষ করে কলকাতার মতো শহরে যেখানে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করে। দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, রাস্তায় রেষারেষি, চালকের অসাবধানতা অথবা নিরাপত্তার অভাবের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। সরকারি উদ্যোগের অভাবে এমন দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা দরকার। এছাড়া সড়কে বাসগুলির গতিসীমা এবং চালকদের আচরণের ওপর নজরদারি বাড়ানো উচিত যাতে এই ধরনের প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা রোধ করা যায়।