লম্ফঝম্প অনেক হল, চলল মমতা-অভিষেকের ভাষণের কাটাছেঁড়া! কিন্তু বার্তা সেই অন্তঃসার

আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ একুশে জুলাইয়ের সকালের চিত্রটা বাকি অন্যান্য বছরের মতোই ছিল। সকাল সকাল ঘাসফুল সমর্থকরা দল বেঁধে এগিয়ে যাচ্ছিল ধর্মতলার দিকে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত…

mamata banerjee

আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ একুশে জুলাইয়ের সকালের চিত্রটা বাকি অন্যান্য বছরের মতোই ছিল। সকাল সকাল ঘাসফুল সমর্থকরা দল বেঁধে এগিয়ে যাচ্ছিল ধর্মতলার দিকে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন তাঁদের প্রাণের প্রিয় দিদি এবং তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়র বক্তব্য শোনার জন্য ছুটে গিয়েছে মধ্যকলকাতার বুকে। রাজপথ আজ দাপিয়ে বেড়িয়েছে তৃণমূল কর্মীরা। আজ রবিবার হওয়ার সুবাদে রেকর্ড সংখ্যক ভিড় হওয়ার সম্ভবনার কথা জানিয়েছিল তৃণমূল। ভিড়ও হয়েছিল। এক কথায় বলতে গেলে খালি হাতে ফিরলেন তৃণমূল কর্মীরা। যদিও আক্ষরিক অর্থে খালি হাতে নয়, কেউ কেউ রাস্তার ধারের চটজলদি খাবার কিনে, আবার কেউ জলের বোতল এবং টুপি হাতে। কেউ আবার মাঝপথ থেকেই অমুক নেতার চোখ এড়িয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

একুশের মঞ্চে বক্তৃতায় সাংঘাতিক ভুল মমতার! এ কী বললেন তৃণমূল সুপ্রিমো?

   

সকাল সকাল ট্রেনে ভিড় ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা বেশী। প্রায় সব ট্রেনেই ঝাণ্ডা হাতে তৃণমূল কর্মীদের ভিড় চোখে পড়েছে। অনেকে তো ট্রেন থেকে নেমে ব্যারাকপুরের দাদা বৌদিতে আস্তানা গেড়েছে। অনেকেই খোশমেজাজে জয় বাংলা স্লোগান দিতে দিতে শিয়ালদহমুখী হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও রবিবার তৃণমূলের অন্তঃসার শূন্যতা চোখে পড়ল। মঞ্চে যে সমস্ত বক্তা বক্তব্য রাখলেন তাঁদের কেউই তেমন দাগ কাটতে পারিনি। লোকসভা নির্বাচনের আগে গত ১০ মার্চ ব্রিগেডে সমাবেশ করেছিল তৃণমূল। তার ঠিক ১৩৩ দিনের মাথায় ২১ জুলাই উদ্‌যাপন করল তারা। তবে এ বারের ২১ জুলাইয়ের অন্য একটি মাত্রা ছিল। সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিম, অখিলেশ যাদব, মধুপর্ণা ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া,দুলাল মুর্মুরা তেমন দাগ কাটতে পারলেন না। এতদিন অন্তরালে থাকার পরেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যেও একটা ছাপোষা ছাপ দেখা গিয়েছে। মনে হয়েছে তিনি লোকসভা নির্বাচনের বক্তব্য রাখছে। অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও নরম সুর।

ভারতীয় ডাকে ‘ডিজিটাল বিপ্লব’, আর থাকবে না পিনকোড-রাস্তার নাম

তিনি কর্মীদের সংযত হওয়ার বার্তা দিয়েছেন, ভোটের ফল কেন খারাপ হয়েছে সেই ফল নিয়ে কর্মীদের সাধারণ মানুষের মধ্যে গিয়ে খোঁজ নিতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, ” বিত্তবান নয়, বিবেকবান লোক চাই!” এই বক্তব্য কি দলের দাঁত-নখ বের করা কুচো নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন? নাকি জয়ন্ত-জামাল- শাজাহানদের জন্য, সেই নিয়ে দীর্ঘ কাঁটাছেড়া হতে পারে।অখিলেশ যাদব মঞ্চে বক্তব্য রাখলেও সেই বক্তব্য জাতীয় স্তরের কতটা প্রভাব ফেলল, সেই নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠিক আগের বক্তা ছিলেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ। এই কর্মসূচিতে আমন্ত্রণের জন্য মমতাকে ধন্যবাদ জানান তিনি। বলেন, “দিদি যে ভাবে খুশি হয়ে কর্মীদের সঙ্গে দেখা করছেন, এই যে নেতা এবং কর্মীদের সম্পর্ক, এটাই দলকে মজবুত করে। যে কর্মীরা শহিদ হয়েছেন, তাঁদের স্মরণ করছি। সব দলের ভাগ্যে এমন কর্মী মেলে না, যাঁরা প্রাণ দিতে পারেন।” তাঁর ১৪ মিনিটের বক্তব্য কি আদেও শহিদ মঞ্চে কতটা উপযুক্ত, সেই নিয়ে গবেষণা হতে পারে।

১০ লাখ চাকরি তৈরি, বড় ঘোষণা করেও শঙ্কিত মমতা! কেন ?

তবে অনেকের মতে ঘাসফুল এখন থেকেই শুদ্ধিকরণ চাইছে। সামনের ভোটগুলি কি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিয়ে জেতা যাবে না, সেটা বিলক্ষণ জানে মমতা। তাই আগেভাগে ঘর গোছাতে ব্যস্ত। সমাবেশের শেষে মমতা তাঁর প্রিয় স্লোগান ‘খেলা হবে’ শুনিয়েছেন। এই স্লোগান দিয়েই তিনি ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে রুখে দিয়েছিলেন। তৃণমূলের লোকজন অবশ্য বলছেন, ২০২৬ সাল পর্যন্ত ‘খেলা’ অনেক বেশি হবে তৃণমূলের অন্দরে। কিন্তু এইদিন মঞ্চে মধুপর্ণা ঠাকুর ছাড়া তৃণমূলের কোনও নতুন মুখকে দেখা গেল। প্রসঙ্গত গত বছর এই মঞ্চ থেকেই আলোয় উঠে এসেছিল রাজন্যা হালদার। কিন্তু এইবার সেই রকম কিছু হল না।

বিধাননগরের অটোচালক সকালে সভা শুরুর আগে বললেন, ” দিদির ভাইয়ের ডাকে যেতে হবে দাদা। ওরা তো মঞ্চ অবধি যাবে না, কোনও বাংলার ঠেকে ঢুকে পড়বে।” যদিও এই ঘটনার সত্যটা খুঁটিয়ে দেখা হয়নি। তবে ডিম ভাতের বদলে মাংস ভাতের উত্তরণ কি শুদ্ধিকরণের পথে হাঁটাবে, থাকছে প্রশ্ন।