ছাব্বিশে তৃণমূলের জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা: তথাগত রায়

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের একবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এলেন বিজেপি নেতা এবং রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় (Tathagata Roy)। তাঁর সাম্প্রতিক এক্স (পূর্ববর্তী টুইটার) পোস্টে পশ্চিমবঙ্গের…

Tathagata Roy Advises Bengal BJP to Take Inspiration from Mamata Banerjee

short-samachar

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের একবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এলেন বিজেপি নেতা এবং রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় (Tathagata Roy)। তাঁর সাম্প্রতিক এক্স (পূর্ববর্তী টুইটার) পোস্টে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের সম্ভাব্য জয়ের বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেছেন।

   

তথাগত রায় লিখেছেন, “আরও এক সপ্তাহ কেটে গেল, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি এখনও পূর্ণকালীন সভাপতির নেতৃত্ব পায়নি। ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের সময় আরও এক সপ্তাহ কাছে এসে গেল। তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হলো। আমি আর কী বলব?”

তাঁর এই মন্তব্য পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা এবং সাংগঠনিক সমস্যার দিকে সরাসরি ইঙ্গিত করে। দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের বিজেপি ইউনিট একটি কার্যকর নেতৃত্বের অভাবে ভুগছে, যা দলটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং কৌশলে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

বিজেপির সাংগঠনিক সংকট
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নেতৃত্বের অভাব, এবং স্থায়ী সভাপতি নির্বাচন করতে না পারা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা প্রশ্ন উঠছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি কিছুটা সাফল্য পেলেও তা তৃণমূল কংগ্রেসের বিশাল জয়ের সামনে ম্লান হয়ে যায়। এরপরে দলটির ভাঙ্গন, সাংসদ এবং বিধায়কদের তৃণমূলে ফিরে যাওয়া, এবং রাজ্যস্তরে কার্যকর নেতৃত্বের অভাব দলটির শক্তি অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

তথাগত রায়ের মন্তব্য অনুযায়ী, সময় যত এগিয়ে যাচ্ছে, বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা আরও স্পষ্ট হচ্ছে, যা তৃণমূল কংগ্রেসের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল করছে। তিনি পরোক্ষভাবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এই ইস্যুতে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তিশালী অবস্থান
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের সংগঠনকে মজবুত করতে ব্যস্ত। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর তৃণমূল কংগ্রেস এখনো রাজ্যের একচ্ছত্র ক্ষমতায় রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দলটি জনসংযোগ বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলিকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেস আরও একবার জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে। দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং সুসংগঠিত কাঠামো, বিরোধী দলগুলির তুলনায় তৃণমূলকে এগিয়ে রাখছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
তথাগত রায়ের এই মন্তব্যের পরে রাজনৈতিক মহলে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা এই মন্তব্যকে বিজেপির পরাজয়ের স্বীকারোক্তি হিসেবে দেখছেন।

অন্যদিকে, বিজেপির অভ্যন্তরীণ মহলে তথাগত রায়ের এই মন্তব্য ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। দলের কিছু নেতা তাঁর মন্তব্যকে ‘নেতিবাচক’ এবং ‘দলের ক্ষতি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন এখনও দুই বছরের দূরত্বে থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এখন থেকেই উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে। তথাগত রায়ের মতো বর্ষীয়ান নেতার মন্তব্য বিজেপির জন্য আত্মসমীক্ষার বার্তা হতে পারে। তবে, তৃণমূল কংগ্রেস এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে কতটা সক্ষম হবে, তা দেখার বিষয়।

রাজ্যের সাধারণ মানুষও আগামী নির্বাচন সম্পর্কে আগ্রহী। পরিবর্তনের জন্য বিজেপি তাদের সংগঠনে কী ধরনের পরিবর্তন আনে এবং তৃণমূল কংগ্রেস তাদের উন্নয়নমূলক বার্তা কীভাবে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়, তার উপরই নির্ভর করবে ২০২৬-এর নির্বাচনী ফলাফল।