“এখানেই আমার রিটায়ার্মেন্ট হবে”! রাজনীতি থেকে অবসরের বড় ঘোষণা শুভেন্দুর

এবার শুভেন্দু অধিকারীর মুখে শোনা গেল রাজনীতি থেকে রিটায়ারমেন্ট নেওয়ার কথা। কলকাতায় ইএম বাইপাসের ধারে সয়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে বিজেপির বর্ধিত কার্যকরণী সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর…

short-samachar

এবার শুভেন্দু অধিকারীর মুখে শোনা গেল রাজনীতি থেকে রিটায়ারমেন্ট নেওয়ার কথা। কলকাতায় ইএম বাইপাসের ধারে সয়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে বিজেপির বর্ধিত কার্যকরণী সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর সেই সভা মঞ্চে দাঁড়িয়েই রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে বড়সড় ঘোষণা করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)।

   

লোকসভা ভোটে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না হওয়ার পর, চার বিধানসভার উপনির্বাচনেও শোচনীয় পরাজয়। সবমিলিয়ে বিজেপির অভ্যন্তরে কোথাও না কোথাও দায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছিল শুভেন্দুর দিকেই। রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের এমনটাই অভিমত। সেখানে বিজেপির এই সভাতে শুভেন্দু যে নিজের আত্মপক্ষ সমর্থনে কথা বলবেন সেটাই স্বাভাবিক ছিল। এবং বাস্তবে হলও তাই।

মঞ্চে দাঁড়িয়ে শুভেন্দুর পরিষ্কার বক্তব্য, তিনি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। বিজেপির সাংগঠনিক কাজকর্ম বা সিদ্ধান্ততে তাঁর কোনও হাত নেই। সঙ্গে তিনি আরও বলেন, ভোটের ফলাফল পর তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে দল বিরোধী কোনও মন্তব্য করেননি। দলের নিচু তলার কর্মী সমর্থকদের মনোবল ভেঙ্গে যায় এমন কোন বক্তব্য বা দোষারোপ তিনি কখনোই করেননি।

সাম্প্রতিক সময়ে, নির্বাচনে খারাপ ফলাফলের পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন বিজেপির একাধিক নেতা। একদিকে দিলীপ ঘোষ লোকসভা নির্বাচনের পরে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন দলের পরাজয় নিয়ে। সেরকমই উপনির্বাচনে পরাজয়ের পরেই সুকান্ত মজুমদার রীতিমতন একের পর এক বোমা ফাটিয়ে চলেছেন। নাম না করেও তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য যে শুভেন্দু অধিকারীই, মানছেন খোদ বিজেপির অনেকেই। আর এরকম অবস্থাতে দিলীপ-সুকান্ত জুটির আক্রমণের পাল্টা দিলেন শুভেন্দু? অন্তত শুভেন্দুর আজকের বক্তব্য শুনে সেরকমটাই মনে হচ্ছে।

তবে নিজের রাজনৈতিক জীবনের অবসর নিয়ে আজ বড় ঘোষণা করেছেন শুভেন্দু। এই প্রসঙ্গে তিনি টেনে এনেছেন মুকুল রায়ের নাম। মুকুল রায়কে কটাক্ষ করে তার বক্তব্য, “মুকুল রায়ের মতো সবকিছু কেড়ে নেওয়ার পর আমি এখানে আসিনি। আমি এসেছি সবকিছু ছেড়েছুড়ে। এবং আমি কথা দিচ্ছি আজকে এই সভায় দাঁড়িয়ে যে, সনাতন এবং রাষ্ট্রবাদ, এই ভারতীয় জনতা পার্টিতেই আমার রিটায়ারমেন্ট হবে”।

নিজের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ১৯৭০ সালে তাঁর বাবা প্রথম এমপি হয়েছিলেন। দুবারের সাংসদ চারবারের বিধায়ক শিশির অধিকারী। শুভেন্দু নিজে দীর্ঘদিন সংসদ। ১৯৮৫ সালে প্রথম কাউন্সিলর হয়েছিলেন। রাজনীতি থেকে তাঁর আর কিছু পাওয়ার নেই। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, পদের জন্য নয় মমতা বিরোধীতার লক্ষ্যেই তিনি রাজনীতি করছেন, এই বার্তাই নিজের বিরোধীদের দিতে চাইছেন শুভেন্দু।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আবহে, শুভেন্দুর এই বক্তব্য যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করা হচ্ছে। তার কারণ, বিভিন্ন মহলে ইতিমধ্যেই শুভেন্দুর ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার জল্পনা শুরু হয়েছে। শুভেন্দু যতই বলুন সংগঠনে তার কোন একক সিদ্ধান্ত নেই। অনেকেরই অভিমত যে ২০২১ এর পরে বঙ্গ বিজেপির অলিখিত ক্যাপ্টেন তিনিই। সেখানে সাম্প্রতিক সময়ে বারংবার ব্যর্থতার পর তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে এই মুহূর্তে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাজ্য সভাপতি পদে দিলীপ ঘোষের কামব্যাক হলে সেক্ষেত্রে শুভেন্দুর কি হবে? সেই নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই রাজ্য রাজনীতি সরগরম। এমনকী অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ, শুভেন্দুর বিজেপি ছাড়া সম্ভাবনার সম্ভাবনার কথাও প্রচার শুরু করেছিলেন।

এরকম পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের সামনে বিজেপির প্রতি তাঁর আনুগত্যের উদাহরণ দিলেন শুভেন্দু এমনটাই মনে করা হচ্ছে। একটা সময় এমনও শোনা যাচ্ছিল আরএসএস বঙ্গ বিজেপি নিয়ে বিশেষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃণমূল থেকে আগত কোনও নেতা বা বিধায়ককে দলের খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ দেওয়া হবে না। এই কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে নিজের রাজনৈতিক অবসর নিয়ে ঘুরিয়ে কী শুভেন্দু আনুগত্যের বার্তা দিলেন আরএসএসকেও? এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বক্তৃতা করছেন, সেই মঞ্চেই বসেছিলেন দিলীপ সুকান্ত। ভোট পরবর্তী ক্ষেত্রে বিরোধী দলনেতা হিসেবে নিজের কর্তব্যের খতিয়ান দিতে গিয়ে তাঁদেরকেও বার্তা দিলেন তিনি? ভোটে হিংসা এবং পরবর্তীকালে ভোট দিতে না দেওয়া নিয়ে তাঁর যে আন্দোলন, সেটাতে সবার সহযোগিতা চাইছেন শুভেন্দু। কোথাও না কোথাও গিয়ে দলের মধ্যে নিজের গ্রহণযোগ্যতা যাতে অটুট থাকে তার চেষ্টাটা পরিষ্কার। বিজেপির আজকের এই বর্ধিত কার্যকরণী সভায় শুভেন্দু বক্তব্যে সেটাই ধরা পড়ছে মত অভিজ্ঞ মহলের।