খুনের চক্রান্ত বলে বিস্ফোরক অভিযোগ নির্যাতিতার মায়ের

আরজি কর মেডিকেল কলেজ কাণ্ডে ন্যায়বিচারের দাবিতে ডোরিনা ক্রসিং থেকে শুরু হওয়া নবান্ন (Survivor Mother)অভিযানে পুলিশের লাঠিচার্জে গুরুতর আহত হয়েছেন নির্যাতিতার মা। তাঁর কপালে গভীর…

Survivor Mother allegation

আরজি কর মেডিকেল কলেজ কাণ্ডে ন্যায়বিচারের দাবিতে ডোরিনা ক্রসিং থেকে শুরু হওয়া নবান্ন (Survivor Mother)অভিযানে পুলিশের লাঠিচার্জে গুরুতর আহত হয়েছেন নির্যাতিতার মা। তাঁর কপালে গভীর চোট লাগায় তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এই ঘটনায় নির্যাতিতার পরিবার বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে দাবি করেছে যে, তাঁদের মেরে ফেলার চক্রান্ত করা হয়েছে। এই ঘটনা কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে এবং রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

   

নবান্ন অভিযানের পটভূমি

আরজি কর মেডিকেল কলেজে গত বছর ঘটে যাওয়া এক চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার এক বছর পূর্তিতে তাঁর মা-বাবা নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন। এই অভিযানে নির্যাতিতার পরিবারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ এবং বিজেপি সমর্থকরা অংশ নেন।

পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ নামে একটি সংগঠন এই অভিযানের আয়োজকের দায়িত্ব পালন করে। মিছিলটি পার্কস্ট্রিট থেকে শুরু হয়ে ডোরিনা ক্রসিং হয়ে নবান্নের দিকে অগ্রসর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ব্যারিকেডের কারণে মিছিলটি আটকে যায়, যার ফলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

পুলিশের লাঠিচার্জ ও নির্যাতিতার মায়ের আঘাত

পার্কস্ট্রিটে মিছিল শুরু হওয়ার পর আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এই লাঠিচার্জে নির্যাতিতার মা গুরুতর আহত হন। তাঁর কপালে গভীর চোট লাগে এবং হাতের শাঁখা ভেঙে যায়। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং অভিযোগ করেন, “পুলিশের মারে আমার কপাল ফুলেছে।

এটা আমাদের মেরে ফেলার চক্রান্ত।” তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনায় প্রায় ১০০ জন আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে, যার মধ্যে বিজেপি নেতা অর্জুন সিংও রয়েছেন, যাঁর মাথা ফেটে গেছে।

বিজেপির অভিযোগ

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, “মমতার পুলিশ নির্যাতিতার মা-বাবাকেও মেরেছে। এটা গণতন্ত্রের উপর আঘাত।” তিনি দাবি করেন, পুলিশ শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর এলোপাথাড়ি লাঠিচার্জ করেছে। অধিকারী রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে পুলিশের বাধার মুখে রাস্তায় বসে পড়েন এবং প্রতিবাদ জানান।

Advertisements

বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পালও বলেন, “নির্যাতিতার মায়ের উপর হামলা রাজ্য সরকারের নৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ।” তারা আরও দাবি করেন, এই অভিযানে কোনও দলীয় পতাকা ব্যবহার করা হয়নি, এবং এটি ছিল সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও জনজীবন

নবান্ন অভিযানের আগে থেকেই কলকাতা ও হাওড়ায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। নবান্ন চত্বরে ১৬৩ ধারা জারি করা হয়, যার ফলে কোনও জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়। পার্কস্ট্রিট, ডোরিনা ক্রসিং এবং সাঁতরাগাছিতে লৌহ ব্যারিকেড, জলকামান এবং ড্রোন নজরদারি মোতায়েন করা হয়।

এই ঘটনার ফলে পার্কস্ট্রিট ও হাওড়ায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়, যা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করে। স্থানীয় বাসিন্দা সুজিত মিত্র বলেন, “এই সংঘর্ষে আমরা সাধারণ মানুষ ভোগান্তির মধ্যে পড়েছি। রাস্তা বন্ধ থাকায় আমাদের কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে।”

কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে পুজোর আগে যানজট নিয়ন্ত্রণে বড় পদক্ষেপ

আইনি পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ

কলকাতা হাইকোর্টে নবান্ন অভিযান আটকাতে মঙ্গলাহাট ব্যবসায়ী সমিতি এবং হাওড়ার এক বাসিন্দা জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিল। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, পুলিশের অনুমতি ছাড়া কোনও জমায়েত করা যাবে না। তবে আন্দোলনকারীরা এই নির্দেশ অমান্য করে মিছিল করায় পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। বিজেপি এই ঘটনার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

পার্কস্ট্রিটে পুলিশের লাঠিচার্জে নির্যাতিতার মায়ের গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। নির্যাতিতার পরিবারের বিস্ফোরক অভিযোগ এবং বিজেপির প্রতিবাদ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে চাপ বাড়িয়েছে। এই ঘটনা আরজি কর কাণ্ডে ন্যায়বিচারের দাবিকে আরও জোরালো করেছে, এবং ভবিষ্যতে এই আন্দোলন আরও বড় রূপ নিতে পারে।