শান্তিপূর্ণ মিছিলের নির্দেশে পুলিশের লাঠি, বিস্ফোরক নির্যাতিতার বাবা

আরজি কর মেডিকেল (Lathicharge) কলেজে গত বছর ঘটে যাওয়া এক চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার এক বছর পূর্তিতে নির্যাতিতার পরিবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল। এই…

Lathicharge in nabanna obhijan

আরজি কর মেডিকেল (Lathicharge) কলেজে গত বছর ঘটে যাওয়া এক চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার এক বছর পূর্তিতে নির্যাতিতার পরিবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল। এই অভিযানে পুলিশের লাঠিচার্জে নির্যাতিতার মা গুরুতর আহত হন, এবং পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ তাদের উপর অমানবিক আচরণ করেছে।

   

নির্যাতিতার বাবা শনিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করে বলেন, “কলকাতা হাইকোর্ট আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ আমাদের উপর লাঠিচার্জ করেছে, যার ফলে আমরা আহত হয়েছি। ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট পুলিশ আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করেছে।

আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পরই আমাদের মেয়ের দেহ দেখতে পেরেছিলাম। তার আগে আমাদের ৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল।” এই অভিযোগ রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে।

নবান্ন অভিযান ও পুলিশের লাঠিচার্জ

আরজি কর কাণ্ডে ন্যায়বিচারের দাবিতে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের আয়োজনে নির্যাতিতার পরিবার, সাধারণ মানুষ এবং বিজেপি সমর্থকরা পার্কস্ট্রিট থেকে নবান্ন অভিযান শুরু করেন। মিছিলটি ডোরিনা ক্রসিং থেকে পার্ক স্ট্রিট পৌঁছালে পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পড়ে। আন্দোলনকারীরা গার্ডরেল টপকানোর চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।

এই ঘটনায় নির্যাতিতার মা কপালে গভীর চোট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। বিজেপি নেতা অর্জুন সিংসহ প্রায় ১০০ জন আন্দোলনকারী আহত হন। নির্যাতিতার পিতা বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের উপর অমানবিকভাবে লাঠিচার্জ করেছে। আমার স্ত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন।”

নির্যাতিতার পিতার অভিযোগ

নির্যাতিতার পিতা আরও বলেন, “আমাদের মেয়ের মৃত্যুর পর আমাদের দেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। আমরা ৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পরই আমরা দেহ দেখতে পাই।”

তিনি পুলিশের আচরণের নিন্দা করে বলেন, “আমরা শুধু ন্যায়বিচার চাই। কিন্তু পুলিশ আমাদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করেছে যেন আমরা অপরাধী।” তিনি কলকাতা হাইকোর্টের অনুমতির কথা উল্লেখ করে বলেন, “আদালত আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অনুমতি দিয়েছিল। তাহলে পুলিশ কেন আমাদের উপর এভাবে হামলা করল?”

বিজেপির প্রতিক্রিয়া

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, “নির্যাতিতার পরিবারের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ গণতন্ত্রের উপর আঘাত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পুলিশ এই অমানবিক কাজ করেছে।”

Advertisements

তিনি নির্যাতিতার মাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়ে বলেন, “আমি ওঁকে মিছিলে অংশ নিতে উৎসাহ দিয়েছিলাম। তাই ওঁর সুস্থতা আমার দায়িত্ব।” বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, “নির্যাতিতার মায়ের উপর হামলা রাজ্য সরকারের নৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ। আমরা ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।”

তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া

তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনাকে বিজেপির ‘রাজনৈতিক নাটক’ বলে সমালোচনা করেছে। তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “ন্যায়বিচার চাইলে সিবিআই-এর কাছে যান। কলকাতা পুলিশের তদন্তে কোনও গাফিলতি নেই, এবং সিবিআই আদালতকে এই কথা জানিয়েছে।”

তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেছে এবং পুলিশের উপর পাথর ছুঁড়েছে। পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে।” তিনি আরও দাবি করেন, বিজেপি এই ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে।

জনজীবনে প্রভাব

এই সংঘর্ষের ফলে পার্কস্ট্রিট, ডোরিনা ক্রসিং এবং হাওড়ায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মৃদুল সাহা বলেন, “এই ঘটনায় আমরা সাধারণ মানুষ ভোগান্তির মধ্যে পড়েছি। রাস্তা বন্ধ থাকায় আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে।” নবান্ন চত্বরে ১৬৩ ধারা জারি থাকায় কোনও জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পুলিশের ড্রোন নজরদারি এবং লৌহ ব্যারিকেডের কারণে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

‘অভয়া মঞ্চ’র আহ্বানে কালীঘাট অভিযানে যোগ দিতে আসছেন তমন্না’র মা

আইনি পদক্ষেপ

কলকাতা হাইকোর্টে নবান্ন অভিযান বন্ধ করার জন্য জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আদালত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অনুমতি দিলেও, পুলিশের অনুমতি ছাড়া জমায়েত নিষিদ্ধ করেছিল। নির্যাতিতার পিতা বলেন, “আমরা আইনি পথে লড়াই চালিয়ে যাব। আমাদের মেয়ের জন্য ন্যায়বিচার চাই।” পুলিশ আটক কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে।

নির্যাতিতার পিতার অভিযোগ এবং পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনা আরজি কর কাণ্ডে ন্যায়বিচারের দাবিকে আরও জোরালো করেছে। পুলিশের আচরণ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর দেহ দেখতে পাওয়ার ঘটনা রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়িয়েছে।

শুভেন্দু অধিকারীর আন্দোলন প্রত্যাহার এবং নির্যাতিতার মাকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়া এই ঘটনায় মানবিক দিক যোগ করলেও, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব অব্যাহত রয়েছে। এই ঘটনা ভবিষ্যতে আরও বড় আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করতে পারে।