সুপ্রিম কোর্টে মাথা নোয়াতে বাধ্য রাজ্য সরকার: বিস্ফোরক বিকাশ ভট্টাচার্য

দীর্ঘদিনের আন্দোলন, অসন্তোষ এবং আদালতের লড়াইয়ের পরে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ (West Bengal DA dues) নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার (১৬…

Bikashranjan Bhattacharyya

দীর্ঘদিনের আন্দোলন, অসন্তোষ এবং আদালতের লড়াইয়ের পরে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ (West Bengal DA dues) নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার (১৬ মে) দেশের সর্বোচ্চ আদালত রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে কর্মীদের বকেয়া ডিএর অন্তত ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে হবে।

এই মামলায় রাজ্য সরকারের তরফ থেকে একাধিকবার জানানো হয়েছিল যে, বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মেটানো তাদের পক্ষে আর্থিকভাবে সম্ভব নয়। রাজ্যের আইনজীবী আদালতে বলেন, “৫০ শতাংশ বকেয়া ডিএ মেটাতে গেলে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। সেই টাকা রাজ্য সরকার দিতে পারবে না। এত বড় অঙ্ক খরচ করলে রাজ্যের স্বাভাবিক প্রশাসনিক কাজকর্ম ব্যাহত হবে।”

   

তবে সুপ্রিম কোর্ট এই যুক্তিকে আমল দিতে রাজি হয়নি। বিচারপতিদের মন্তব্য ছিল, “সরকারি কর্মীরা কাজ করেন, এবং তাঁদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা যায় না। শুধু অর্থের অজুহাতে দায়িত্ব এড়ানো যায় না।” আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ—চার সপ্তাহের মধ্যে ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।

এই মামলায় রাজ্য সরকারি কর্মীদের পক্ষে সওয়াল করেন বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি আদালতে বলেন, “বছরের পর বছর ধরে কর্মীরা তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাইকোর্ট এর আগে রায় দিয়েছিল, তবু রাজ্য সেই রায় কার্যকর করেনি। এখন অন্তত আংশিক হলেও কিছুটা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হোক।” তারই প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশ দেয়।

Advertisements

বিকাশ ভট্টাচার্য পরে জানান, “রাজ্য তো আরও বড় ধাক্কা খাচ্ছিল। সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি খারিজ করে দিতে চাইছিল। তখন রাজ্যের তরফে একরকম অনুনয়-বিনয় শুরু হয়। সেই সময়েই অন্তত কিছুটা সময় এবং ছাড় দেওয়া হয়।” তিনি এ-ও বলেন, “এই রায় শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সমগ্র দেশের ক্ষেত্রেই এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কর্মচারীদের প্রাপ্য বঞ্চিত করা যাবে না।”

প্রসঙ্গত, কলকাতা হাইকোর্ট আগে নির্দেশ দিয়েছিল, রাজ্য সরকারকে সমস্ত বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে যায়। রাজ্যের দাবি ছিল, কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যের ডিএর হারে পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক, এবং এটি বাধ্যতামূলক নয়। তবে সুপ্রিম কোর্ট তা মানতে নারাজ। মামলার শুনানিতে আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, “ডিএ সংক্রান্ত মামলার একটি সর্বভারতীয় গুরুত্ব রয়েছে। অন্যান্য রাজ্যেও এমন মামলা হতে পারে, তাই এই রায় ভবিষ্যতের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

এই রায় সামনে আসার পর রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। বহু কর্মী সংগঠন বলছে, এটি আন্দোলনের বড় জয়। যদিও পুরো বকেয়া না মিললেও, এই নির্দেশ কার্যকর হলে তা দীর্ঘদিনের বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক বড় পদক্ষেপ হবে।
এখন দেখার, রাজ্য সরকার আদালতের নির্দেশ কত দ্রুত কার্যকর করে এবং পরবর্তী শুনানিতে কী অবস্থান নেয়।