বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি ড. সুকান্ত মজুমদারের (Sukanta) অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী যৌনকর্মীদের নিয়ে অপমানজনক একটি মন্তব্যকে ঘিরে বঙ্গ রাজনীতিতে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে শশী পাঁজা তাঁর এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ জানিয়েছেন, এবং বিভিন্ন মহল থেকে তাঁর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার দাবি উঠেছে। প্রসঙ্গত রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকতেই পারে কিন্তু তা নিয়ে এই ধরণের কদর্য মন্তব্য করে যৌনকর্মীদের ছোট করা উচিত নয়।
সমালোচকদের মতে, সুকান্ত মজুমদারের (Sukanta) মন্তব্য সমাজের একটি দুর্বল গোষ্ঠীকে রাজনৈতিক কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির জন্য ব্যবহার করেছে, যা অমানবিক এবং সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ২০২৫ সালের ২১ জুন, শনিবার, সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ সুকান্ত মজুমদারের একটি মন্তব্য ভাইরাল হয়, যেখানে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আক্রমণের অংশ হিসেবে যৌনকর্মীদের নিয়ে অপমানজনক উল্লেখ করেন।
এই মন্তব্যে তিনি তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে যৌনকর্মীদের তুলনা করে তাদের পেশাকে হেয় প্রতিপন্ন করেন। এই বক্তব্য সমাজের বিভিন্ন স্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা এই মন্তব্যকে “অমানবিক”, “লজ্জাজনক” এবং “নৈতিকতাহীন” বলে সমালোচনা করেছেন। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “যৌনকর্মীদের মতো সমাজের সবচেয়ে দুর্বল গোষ্ঠীকে রাজনৈতিক কৌতুকের জন্য ব্যবহার করা অমার্জনীয়। যারা এমন নোংরা কথা বলেন, তাদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই।”
যৌনকর্মীরা সমাজের একটি অত্যন্ত প্রান্তিক গোষ্ঠী, যারা দারিদ্র্য, সামাজিক বঞ্চনা এবং শোষণের শিকার। তাদের জীবনযাত্রা এবং পেশা নিয়ে কটাক্ষ বা অপমানজনক মন্তব্য সমাজে তাদের প্রতি বিদ্যমান কলঙ্ককে আরও গভীর করে (Sukanta)। মানবাধিকার কর্মী এবং সমাজকর্মীরা সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্যের নিন্দা করে বলেছেন, এই ধরনের বক্তব্য যৌনকর্মীদের প্রতি সমাজের সংবেদনশীলতাকে ক্ষুণ্ন করে এবং তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের পথ প্রশস্ত করে।
কলকাতার একটি এনজিও, (Sukanta) ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি’, যারা যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে, এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই ধরনের মন্তব্য আমাদের সমাজের প্রান্তিক গোষ্ঠীর প্রতি অসম্মান প্রকাশ করে। আমরা সুকান্ত মজুমদারের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানাচ্ছি।”
তৃণমূল কংগ্রেস এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে।
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “সুকান্ত মজুমদারের (Sukanta) এই মন্তব্য তাঁর এবং তাঁর দলের সংস্কৃতির প্রতিফলন। তারা সমাজের দুর্বল গোষ্ঠীকে অপমান করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চায়।” তিনি আরও বলেন, “বিজেপি নেতারা বারবার নারী এবং প্রান্তিক গোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করে আসছেন। এটি তাদের নৈতিক দেউলিয়াপনার প্রমাণ।”
তৃণমূলের আরেক নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেন, “সুকান্ত মজুমদারের এই মন্তব্য কেবল যৌনকর্মীদের নয়, সমগ্র নারী সমাজের প্রতি অসম্মান। তিনি অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে বাধ্য।” বিজেপির পক্ষ থেকে এখনও এই মন্তব্যের বিষয়ে কোনো সরকারি বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে, দলের একাংশের নেতারা ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন, সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য ব্যক্তিগত মতামত এবং দলের অফিসিয়াল অবস্থান নয়।
এই ঘটনায় বিজেপির অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়ছে, কারণ ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ধরনের বিতর্ক দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি করতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে সুকান্ত মজুমদারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তীব্র হচ্ছে।
এক্স প্ল্যাটফর্মে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “যৌনকর্মীরা আমাদের সমাজের অংশ। তাদের পেশাকে অপমান করা মানে সমাজের একটি অংশকে অস্বীকার করা। সুকান্ত মজুমদারের (Sukanta) এই মন্তব্য লজ্জাজনক।” আরেকজন লিখেছেন, “রাজনীতির নামে এমন নীচ স্তরের মন্তব্য বন্ধ হওয়া উচিত। বিজেপি নেতারা কি ভাবেন, তারা যা খুশি বলতে পারেন?”
এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে ইতিমধ্যেই তীব্র বিরোধ চলছে, এবং এই মন্তব্য তৃণমূলকে বিজেপির বিরুদ্ধে নতুন আক্রমণের সুযোগ দিয়েছে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও এই বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করেননি, তবে দলের অন্যান্য নেতারা এই ঘটনাকে বিজেপির “নারীবিদ্বেষী মানসিকতা” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে। তারা বলছে, এই ধরনের মন্তব্য শুধু অপমানজনকই নয়, যৌনকর্মীদের প্রতি সামাজিক বৈষম্যকে উৎসাহিত করে(Sukanta)। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০২২ সালে যৌনকর্মীদের অধিকার সুরক্ষার জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল, যেখানে বলা হয়েছিল, যৌনকর্মীদের সমান মানবাধিকার এবং সম্মানের অধিকার রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য আইনি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
এবার মহাকাশ থেকেও নজরদারি! ভারতের প্রথম স্পাই স্যাটেলাইট তৈরি টাটার
এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মঞ্চে নৈতিকতা এবং সংবেদনশীলতার প্রশ্ন তুলেছে। বিজেপির সমর্থকদের একাংশ এই মন্তব্যের পক্ষে কথা বললেও, দলের মধ্যে অনেকেই এটিকে একটি ভুল পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। আগামী দিনগুলোতে সুকান্ত মজুমদার এই বিষয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন কিনা, তা দলের ভাবমূর্তি এবং রাজনৈতিক কৌশলের উপর প্রভাব ফেলবে। এই ঘটনা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।