সম্প্রতি সিবিআই-এর দেওয়া তৃতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট নিয়ে তোলপাড় রাজনৈতিক মহলে। এই চার্জশিটে তিন জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে জনৈক “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়” (Abhishek Banerjee) নাম, তবে ওই ব্যক্তি কে, তাঁর পদ, ঠিকানা বা পরিচয় সম্পর্কে কিছুই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। এই নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এ বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলেছেন।
তবে, সিবিআই-এর চার্জশিটে নাম আসার পর রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে। একদিকে, শাসকদলের পক্ষ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর নাম উল্লেখ থাকলেও পরিচয় ছাড়াই চর্চায় এসেছে, অন্যদিকে বিরোধী পক্ষ এই বিষয়ে আরও তৎপর হয়ে উঠেছে। চার্জশিটে যিনি নাম উত্থাপন করেছেন, সেই সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র, যিনি “কালীঘাটের কাকু” নামে পরিচিত, তাঁকে শুক্রবার আদালতে তোলা হয়। সেখানে সাংবাদিকরা বারবার প্রশ্ন করেন, ‘‘চার্জশিটে যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম আছে, তিনি কে? কার নাম বলেছেন?’’
Also Read | চার্জশিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে মুখ খুললেন ‘কালীঘাটের কাকু’ !
কিন্তু, সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র কোনো উত্তর না দিয়ে গাড়িতে উঠে পড়েন। এই পরিস্থিতিতে পুরো বিষয়টি আরও রহস্যময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিবিআই-এর দাবি, সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের বাড়িতে একটি বৈঠক হয়, যেখানে শান্তুনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষ উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকের রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে সিবিআই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে। চার্জশিটে বলা হয়েছে যে, সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র এক জায়গায় বলছেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাথমিকে বেআইনি নিয়োগের জন্য ১৫ কোটি টাকা চেয়েছে, কিন্তু সুজয় সেই টাকা তুলতে পারেননি।’’
এই চার্জশিটের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এক মঞ্চে কথা বলার সময় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘সিবিআই একটি ২৮ পাতার চার্জশিট জমা দিয়েছে, তাতে দু’জায়গায় আমার নাম লিখেছে। কিন্তু অভিষেক ব্যানার্জি কে? এমএলএ না এমপি? কোথায় থাকে, কার ছেলে, কী করে, কিছুই লেখা হয়নি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এটা ঠিক, সিবিআই সঠিকভাবে পরিচয় না উল্লেখ করে শুধু ভাববাচ্যে কথা বলেছে, ঠিক যেমনটা বিজেপি করে।’’
এছাড়া, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, সিবিআই যেন তার বিরুদ্ধে ভীতি এবং চাপের মধ্যে এই চার্জশিট তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘‘সিবিআই ভয় পেয়েছে বলেই তারা আমার পরিচয় উল্লেখ করেনি, কিন্তু আমি নিশ্চিন্ত, এই ধরনের ষড়যন্ত্র আমাদের থামাতে পারবে না।’’ তাঁর কথায় স্পষ্ট, সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও সঠিক প্রমাণ রাখতে পারেনি, তাই এই ধরনের অস্পষ্টতা এবং অসম্পূর্ণ চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সিবিআই-এর এই চার্জশিট তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের চাপ তৈরি করতে পারে, তবে এক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ না থাকার কারণে মামলাটি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। ভবিষ্যতে এই নিয়ে আরও তদন্ত ও আলোচনার প্রয়োজন হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এই পরিস্থিতি নিয়ে যখন তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরোধী দলগুলি নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করছে, তখন সিবিআই-এর প্রতি সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সব মিলিয়ে, রাজনৈতিক মহলে এই চার্জশিট এবং তার পরবর্তী ঘটনাগুলি ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে, এবং এই বিতর্কের শেষ কোথায় তা দেখতে এখনই সময়।