ভুয়ো জন্ম-মৃত্যু শংসাপত্র রুখতে রাজ্যের কড়া নজরদারি নির্দেশ

রাজ্যে ক্রমবর্ধমান জন্ম ও মৃত্যুর শংসাপত্র জালিয়াতির ঘটনায় এবার কঠোর অবস্থান নিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ভবিষ্যতে আর কোনও রেজিস্ট্রার বা সাব-রেজিস্ট্রারকে নিয়োগ করার আগে রাজ্যের (state)…

WB Govt Begins Collecting Data on Employees Eligible for Pending DA Payments

রাজ্যে ক্রমবর্ধমান জন্ম ও মৃত্যুর শংসাপত্র জালিয়াতির ঘটনায় এবার কঠোর অবস্থান নিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ভবিষ্যতে আর কোনও রেজিস্ট্রার বা সাব-রেজিস্ট্রারকে নিয়োগ করার আগে রাজ্যের (state) মুখ্য রেজিস্ট্রারের সম্মতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হল। ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে রাজ্যের সমস্ত জেলা প্রশাসনকে।

কেন এই পদক্ষেপ?
সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, নদিয়া-সহ একাধিক জেলায় ভুয়ো শংসাপত্র তৈরির একাধিক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার তদন্তে। সেখানে অন্তত ৫১০টি ভুয়ো মৃত্যুর শংসাপত্র তৈরি করা হয়েছিল, যার মধ্যে বেশিরভাগই পাসপোর্ট ও সরকারী প্রকল্পে ব্যবহার করার জন্য তৈরি হয়েছিল বলে অনুমান। জেলার প্রশাসন ইতিমধ্যেই মুখ্য রেজিস্ট্রারের দপ্তরকে এই সমস্ত নথি বাতিল করার অনুরোধ জানিয়েছে।

   

নবান্ন সূত্রে খবর, এখন থেকে জেলার রেজিস্ট্রার এবং সাব-রেজিস্ট্রারদের নাম, মোবাইল নম্বর ও ইউজার আইডি মুখ্য রেজিস্ট্রারের অফিসে জমা দিতে হবে। শুধু তাই নয়, জন্ম ও মৃত্যুর শংসাপত্র সংক্রান্ত প্রতিটি ধাপের উপর নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

জানানো হয়েছে, কোনও রেজিস্ট্রার যেন নিজ ক্ষমতায় কাউকে পরিবর্ত বা সহায়ক হিসেবে নিযুক্ত করতে না পারেন। প্রতিটি নিয়োগে মুখ্য রেজিস্ট্রারের সিলমোহর থাকা বাধ্যতামূলক। এই নতুন নিয়মে জেলাস্তরে শংসাপত্র জারি সংক্রান্ত প্রক্রিয়া অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত ও স্বচ্ছ হবে বলে মনে করছে প্রশাসন।

এক মাস আগেই কলকাতায় পাসপোর্টের আবেদন করতে গিয়ে ধরা পড়ে এক ভুয়ো জন্ম শংসাপত্র। উত্তরপ্রদেশের এক যুবক দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা থেকে একটি পঞ্চায়েত থেকে নকল শংসাপত্র বানিয়ে তা জমা দেয়। পরে কলকাতা পুলিশের সিকিউরিটি কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (SCO)-এর তৎপরতায় সেই চক্রের হদিস মেলে। ধৃত যুবকের সঙ্গে একটি বৃহৎ জালিয়াতি চক্রের যোগাযোগের প্রমাণ মেলে, যা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ভুয়ো পরিচয় তৈরিতে ব্যবহৃত হত।

Advertisements

রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ কয়েক মাস ধরেই ভুয়ো পরিচয়পত্র, ভোটার কার্ড ও পাসপোর্ট বানানোর চক্র ভাঙতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের জাল শংসাপত্র তৈরি হলে তা দেশের জাতীয় নিরাপত্তা-কেও বিপদের মুখে ফেলে দিতে পারে বলে প্রশাসনের অভিমত।

নবান্নের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, “জন্ম ও মৃত্যুর শংসাপত্র সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নথি। এর কোনওরকম জালিয়াতি জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কাজ করার সামিল। ভবিষ্যতে এর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হবে।”

জন্ম ও মৃত্যুর শংসাপত্র জালিয়াতি বন্ধে রাজ্য সরকারের এই নতুন পদক্ষেপ প্রশাসনিক স্বচ্ছতা আনবে বলেই মনে করছে মহল। মুখ্য রেজিস্ট্রারের দপ্তরের নজরদারি বাড়লে চক্রগুলি ধরা সহজ হবে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও সচেতন থাকতে বলা হয়েছে, যাতে শংসাপত্র তৈরির ক্ষেত্রে কোনো অনৈতিক প্রক্রিয়ার আশ্রয় না নেন।