বাংলাদেশের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ভোটার তালিকা নিয়ে সম্প্রতি যে অস্বাভাবিক ঘটনাগুলির অবতারণা হয়েছে, তা প্রশাসনের অন্দরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনী কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে, অনলাইন ভোটার তালিকা তৈরির নামে কারসাজি করা হচ্ছে। এই অভিযোগের পরেই নবান্নের প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে এবং ভোটার তালিকা সংশোধন করতে ব্যাপক নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের নেতৃত্বে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের পর থেকেই রাজ্য সরকার বিষয়টি নিয়ে গভীর তদন্তে নেমেছে। ভোটার তালিকার মধ্যে ‘ভূত’ নাম অন্তর্ভুক্তির ঘটনা সামনে আসতে শুরু করেছে। অভিযোগ রয়েছে যে, বেশ কিছু জেলায় ভোটার তালিকায় মৃত ব্যক্তিদের নাম, এমনকি এমন ব্যক্তিদের নামও যুক্ত করা হয়েছে যারা বাস্তবে কখনোই ভোটার হতে পারেননি। এসব কারসাজির মাধ্যমে ভোটের সময় ভোটদানের প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে চাওয়া হচ্ছে, এমনটাই অভিযোগ।
বিশেষত, বারুইপুরের চম্পাহাটি পঞ্চায়েতের ঘটনা প্রাসঙ্গিক। সেখানে গত লোকসভা নির্বাচনের সময় ১৮ থেকে ১৯ হাজার ভোটারের সংখ্যা ছিল, কিন্তু আচমকা তা বেড়ে ২২,৪০০-এ পৌঁছায়। এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। একটি এলাকায় মাত্র কিছুদিনের মধ্যে এত সংখ্যক নতুন ভোটার কীভাবে এসে পৌঁছাল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের নির্দেশ অনুযায়ী, এখন থেকে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজের ওপর কড়া নজরদারি রাখা হবে। আবেদন জমা পড়ার পর সংশ্লিষ্ট দফতরগুলি তা যাচাই করতে বাধ্য হবে। যদি কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় অতিরিক্ত সংখ্যক ভোটার কার্ডের আবেদন জমা পড়ে, তবে তা পুনরায় যাচাই করা হবে। এমনকি, সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ ওঠে যে তারা ভূতুড়ে ভোটার তালিকা তৈরির সঙ্গে যুক্ত, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাজ্য প্রশাসন আরও স্পষ্ট করে জানিয়েছে, ভোটার তালিকার ভুল সংশোধন করতে আরও বেশি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এর পাশাপাশি, বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক ও দফতরগুলিকে এসব বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে একযোগে কাজ করতে হবে যাতে জনগণের ভোটাধিকার ক্ষুণ্ন না হয়।
এই সমস্ত পদক্ষেপের উদ্দেশ্য একটাই— জনগণের আস্থার প্রতি সম্মান রাখা এবং যাতে কোনও রকম প্রতারণার আশ্রয় না নেওয়া যায়। ভূত ভোটার তালিকা থেকে বিরত থাকার জন্য প্রশাসন সবদিক থেকে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করবে এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
প্রশাসনিক পর্যায়ে ইতিমধ্যেই নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে, এই প্রক্রিয়া কতটা সফল হবে, তা ভবিষ্যতে আরও পরিস্কার হবে। তবে, এই পদক্ষেপগুলো রাজ্যবাসীর জন্য আশার সঞ্চার করেছে যে, ভোটের সঠিকতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য প্রশাসন আগাম সতর্ক এবং কঠোর অবস্থানে রয়েছে।