রাতের অন্ধকারে কলকাতার ব্যবসায়িক কেন্দ্র বড়বাজারের অলি-গলিতে তল্লাশি চালিয়েছে কলকাতা(Kolkata) পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF)। শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ শহরের এই ব্যস্ত এলাকায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
বড়বাজার, যা কলকাতার অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র, সেখানে সারাদিন চলে কেনাবেচা। বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের ভিড় থাকে এখানে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে পুরো এলাকা নিস্তব্ধ হয়ে গেলে কলকাতা পুলিশ অভিযান চালায়, যার মাধ্যমে উদ্ধার হয় আরও কিছু আগ্নেয়াস্ত্র।
এই তল্লাশি অভিযান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর আগেই শিয়ালদহের সুরেন্দ্রনাথ কলেজের কাছ থেকে একাধিক অস্ত্রসহ যুবকদের গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাদের জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বড়বাজারে এই তল্লাশি পরিচালনা করা হয়। ওই অভিযানে তিনজনকে আটক করা হয়েছে এবং তাঁদের কাছ থেকে দুটি বন্দুক, ১৭ রাউন্ড গুলি এবং একটি গাড়ি উদ্ধার করা হয়। ধৃতদের নাম সন্তোষ সাহানি, জিতেন্দ্র কুমার এবং মনোজ কুমার, যারা সবাই উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে।
এই অভিযানের গুরুত্ব আরও বাড়ে, কারণ কিছুদিন আগে কলকাতা পুরনিগমের কাউন্সিলর সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে প্রকাশ্যে গুলি চালানো হয়েছিল। সেই ঘটনায় শহরের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। এরপর শিয়ালদহে অস্ত্র উদ্ধারের পর থেকেই শহরে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় এবং বড়বাজারে অস্ত্র উদ্ধারের পর সেই আতঙ্ক আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
পুলিশের তদন্ত থেকে জানা গেছে, সুরেন্দ্রনাথ কলেজের পাশ থেকে যেভাবে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল, তার পরেই ধৃতদের পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। তাদের লক্ষ্য ছিল বড়বাজার। পাঁচ যুবকের একটি চক্র বড়বাজারে বিশাল অঙ্কের লেনদেন হওয়ার খবর পেয়ে সেখানে একটি বড়সড় লুঠের পরিকল্পনা করেছিল। তারা জানতো, বড়বাজারের এক ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে একটি বড় অঙ্কের লেনদেন হওয়ার কথা ছিল। এই তথ্য তারা পেয়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কলকাতায় পৌঁছেছিল।
অস্ত্র সহ আটক তিন যুবক এখন পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে রয়েছে। তাদের কাছ থেকে পুলিশ আরও তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছে, যাতে পুরো পরিকল্পনাটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পুলিশের দাবি, এই অস্ত্র উদ্ধার শহরের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্য।
কলকাতা পুলিশের STF-এর এই অভিযানে একদিকে যেমন শহরের নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত হওয়া যাচ্ছে, তেমনি অপরদিকে অপরাধের ছক এবং অস্ত্রবিতরণের বিরুদ্ধে এক বড় ধরনের বার্তা যাচ্ছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, বড়বাজারের মতো শহরের ব্যস্ত এলাকায় এমন ধরনের অস্ত্রের মজুত, এই শহরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে একেবারে বিপদে ফেলতে পারে। তাই পুলিশ এই ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম রোধে আরও কঠোর হবে বলে জানিয়েছে।
এখনো পর্যন্ত পুলিশ তাদের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।