২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের বাতিল প্যানেলের চাকরিহারা শিক্ষকদের জন্য অবশেষে আশার আলো জ্বলল। দীর্ঘদিন ধরে ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় থাকা এই শিক্ষকদের পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শুরু করল রাজ্য সরকার। তবে এই পুনর্বহাল সরাসরি শিক্ষকতার পদে নয়, বরং শিক্ষক হওয়ার আগে যেসব সরকারি বা আধা–সরকারি পদে তাঁরা কাজ করতেন, সেগুলোতেই ফিরে যাওয়ার সুযোগ মিলবে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই নবান্ন থেকে ২০ জন প্রাক্তন শিক্ষককে তাঁদের আগের সরকারি চাকরিতে ফেরার সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে। এই সংখ্যা যদিও তুলনায় খুবই কম, কিন্তু এটিকে অনেকেই ‘প্রথম পদক্ষেপ’ বলে মনে করছেন। আশা করা হচ্ছে, ধাপে ধাপে আরও আবেদনকারীদের ক্ষেত্রেও একই রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গিয়েছে, মোট প্রায় সাড়ে চার হাজার আবেদন রাজ্য সরকারের কাছে জমা পড়েছে। এরা সকলেই সেই শিক্ষক, যাঁরা ২০১৬ সালের বাতিল প্যানেল থেকে চাকরি পেয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে সেই চাকরি হারাতে হয়েছে। শিক্ষকতার আগে তাঁরা কেউ ছিলেন লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক, কেউ ছিলেন গ্রুপ-ডি কর্মী, আবার কেউ ছিলেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী। এখন তাঁরা তাঁদের পুরনো পদে ফিরে যেতে চান, যাতে অন্তত জীবিকা চালানোর নিশ্চয়তা ফিরে আসে।
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই এই আবেদনের প্রতিটি খুঁটিনাটি যাচাই করছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলির রেকর্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে— কোন কর্মী কোন পদে ছিলেন, কতদিন সেখানে কর্মরত ছিলেন এবং শিক্ষক পদে যোগদানের সময় তাঁরা কীভাবে সেই পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন। এই যাচাই প্রক্রিয়া শেষ হলেই ধাপে ধাপে পুনর্বহালের নির্দেশ জারি হবে।
শিক্ষকতার চাকরি হারানোর পর এই প্রাক্তন কর্মীরা কার্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকেরই সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। কারও সন্তান পড়াশোনা মাঝপথে থেমে যাওয়ার জোগাড়, কারও আবার পরিবারের চিকিৎসা খরচ জোগানো দায়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ অনেকের কাছে আশীর্বাদের মতো।
তবে এ নিয়ে কিছু বিতর্কও আছে। একাংশের মত, সরকারি চাকরিতে পুনর্বহালের ক্ষেত্রে অন্য বেকার প্রার্থীদের সুযোগ কমে যাবে। কিন্তু রাজ্য প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এটি নতুন নিয়োগ নয়, বরং আগে যাঁরা সরকারি চাকরিতে ছিলেন এবং আইনত সেই পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে শিক্ষক হয়েছিলেন, তাঁদেরই ফেরানো হচ্ছে। ফলে এটি কোনওভাবেই নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিযোগিতাকে প্রভাবিত করবে না।
বাকি প্রায় সাড়ে চার হাজার আবেদনের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে নথি অসম্পূর্ণ, আবার কিছু ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী চাকরির রেকর্ড পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসন এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। যাঁদের নথি ও যোগ্যতা যাচাই শেষ হবে, তাঁদের দ্রুত পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
প্রশাসনিক মহলে মনে করা হচ্ছে, এই উদ্যোগ সফল হলে আদালতে বাকি মামলা-মোকদ্দমার চাপও কিছুটা কমবে। একই সঙ্গে চাকরিহারা শিক্ষকদের মানসিক ও আর্থিক সঙ্কটও অনেকটাই লাঘব হবে। যদিও শিক্ষক পদে সরাসরি ফেরার সম্ভাবনা আপাতত নেই, তবুও পূর্ববর্তী সরকারি চাকরিতে ফিরে যাওয়া তাঁদের জন্য একটি বড় স্বস্তি হতে পারে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ২০১৬ সালের বাতিল প্যানেলের চাকরিহারা শিক্ষকদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। পুনর্বহালের এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে বহু পরিবার নতুন করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে, আর দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার পর জীবনে ফিরবে স্থিতি ও নিরাপত্তা।