বর্তমান সময়ের অন্যতম চাঞ্চল্যকর এবং সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে এসএসসি দুর্নীতি (SSC Scam) ও সেই সূত্রে চাকরিহারাদের আন্দোলন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরও চাকরি ফিরে না পাওয়ার বেদনায় রাজপথে নেমে এসেছেন বহু বেকার যুবক-যুবতী, যাঁদের দাবি একটাই—যোগ্য এবং অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে এবং যোগ্যদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে।
এই আন্দোলনের তীব্রতা এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে অনশন এবং ধরনার মাধ্যমে। কলকাতার এসএসসি ভবনের সামনে বহুদিন ধরেই চলছে এই ধরনা। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে এবার একাত্মতা ঘোষণা করেছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্টজনেরা। অনশনমঞ্চে এসে দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি তথা বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, অভিনেতা ও বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষ, এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল এবং আরও অনেকে।
অনশনমঞ্চ থেকে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমরা বারবার বলছি, যোগ্য আর অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করুন। প্রশাসনের কোনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। এটা বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে, এবং শিক্ষার ন্যায়ের সঙ্গে প্রতারণা।”
তিনি আরও বলেন, “এই তরুণদের চোখে আমি শুধু বেদনা দেখি না, দেখি এক ধরনের প্রত্যয়—ন্যায় পাওয়ার, অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার। আমিও একজন শিক্ষক ছিলাম, তাই বুঝি এই লড়াই কতটা সত্য এবং প্রাসঙ্গিক।”
রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, “যাঁরা পরীক্ষায় পাশ করেছেন, কষ্ট করে প্রস্তুতি নিয়েছেন, তাঁরা যদি কাজ না পান—তা হলে এই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রশাসনের উপর মানুষের আস্থা থাকবে না। এই আন্দোলন শুধুমাত্র চাকরির জন্য নয়, এটা একটা প্রজন্মের সম্মান ও আত্মমর্যাদার লড়াই।”
বৃহস্পতিবার শিয়ালদহ থেকে বিশাল মিছিল সংগঠিত হয়, যেখানে অংশ নেন কয়েক হাজার চাকরিহারা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। রাস্তাজুড়ে স্লোগান ওঠে—“যোগ্যদের অধিকার চাই”, “দুর্নীতির অবসান চাই”। আন্দোলনের মূল আহ্বান, এসএসসি-র পক্ষ থেকে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে তালিকা প্রকাশ করে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
চাকরিহারাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “আমি একজন মায়ের চোখ দিয়ে এই ছেলেমেয়েদের কষ্ট দেখি। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে মানবিকতার জায়গা থেকে আমি আজ এখানে এসেছি।”
চলতি সপ্তাহের শুক্রবার এসএসসি ভবনে অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্রমাগত প্রশ্ন উঠছে।
এই আন্দোলন প্রমাণ করছে, যোগ্যতার মূল্য দিতে হবে, ন্যায়ের দাবিতে মানুষ এক হতে জানে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কতটা দ্রুত এবং দায়িত্বশীলভাবে এই সংকটের সমাধান করে।