স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) (SSC) পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নতুন করে আইনি জটিলতার আবহ তৈরি হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে পরীক্ষায় বসার আবেদনের সময়সীমা বাড়ালেও, রাজ্য সরকার ও কমিশন পরীক্ষার নির্ধারিত তারিখ পিছোতে নারাজ। আর এই অবস্থাতেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন একাংশ ‘যোগ্য’ চাকরিহারা (SSC) শিক্ষক। তাঁদের দাবি, পরীক্ষার জন্য আরও পর্যাপ্ত সময় দেওয়া প্রয়োজন। ফলে ফের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ
২১ অগস্ট সুপ্রিম কোর্টে বিশেষ অনুমতি আবেদন (এসএলপি) (SSC) শুনানির সময় বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, প্রার্থীদের আবেদনের সময়সীমা ১০ দিন বাড়াতে হবে। আদালতের মতে, অনেক প্রার্থী বিভিন্ন কারণে আবেদন করতে পারেননি। ফলে তাঁদের সুযোগ দিতে হবে। শীর্ষ আদালতের এই রায়ের ভিত্তিতেই এসএসসি নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
কমিশনের বিজ্ঞপ্তি
সম্প্রতি প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২৪ অগস্ট শনিবার বিকেল পাঁচটা থেকে নতুন করে আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগ খোলা থাকবে ২ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন যোগ্য প্রার্থীরা। একইসঙ্গে নির্দিষ্ট ফি জমা দেওয়ার ব্যবস্থাও খোলা থাকবে। কমিশন আরও জানিয়েছে, ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকেই প্রার্থীরা তাঁদের অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেন।
রাজ্যের অবস্থান
যদিও আবেদন করার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে, তবু পরীক্ষার দিন পিছোনোর বিষয়ে কোনও আগ্রহ দেখায়নি রাজ্য সরকার বা কমিশন। তাঁদের বক্তব্য, একাধিকবার এই পরীক্ষা পিছিয়েছে। আবারও তারিখ পরিবর্তন করলে প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত হবে। ফলে নির্ধারিত সময়েই পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রাজ্য। এই অবস্থানেই ক্ষোভ বাড়ছে চাকরি বঞ্চিতদের মধ্যে।
চাকরিহারাদের ক্ষোভ
যোগ্য (SSC) হয়েও চাকরি পাননি, এমন একাধিক প্রার্থী দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের মতে, আবেদন করার সময়সীমা বাড়ালেও মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে পরীক্ষায় বসা বাস্তবে সম্ভব নয়। অনেকেই এখনও প্রস্তুতির জন্য সময় চান। তাছাড়া নতুন আবেদনকারীরাও সমান সুযোগ পাওয়ার দাবি তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যের সিদ্ধান্ত একেবারেই অযৌক্তিক এবং পক্ষপাতদুষ্ট। তাই আদালতের নির্দেশ মানলেও প্রকৃত স্বার্থসিদ্ধি হচ্ছে না।
ফের আদালতের পথে
এই পরিস্থিতিতে যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা আদালতের কাছে আবেদন জানাবেন যাতে পরীক্ষা পিছিয়ে অন্তত এক মাস সময় দেওয়া হয়। আইনি মহলের একাংশ মনে করছে, আদালত যদি রাজ্যকে স্পষ্ট নির্দেশ না দেয়, তবে নির্ধারিত তারিখেই পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ফলে ফের একবার আদালতকেন্দ্রিক লড়াইয়ে নামছেন চাকরি বঞ্চিতরা।
বড় প্রশ্ন
পুরো ঘটনার পর এখন প্রশ্ন উঠছে—আসলে কাকে সুবিধা দিচ্ছে এই সিদ্ধান্ত? আদালতের নির্দেশ মেনে আবেদন করার সময়সীমা বাড়ালেও যদি পরীক্ষা নির্ধারিত দিনে হয়, তবে নতুন আবেদনকারীরা কতটা সুবিধা পাবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। একইসঙ্গে যাঁরা বহুদিন ধরে চাকরি বঞ্চিত হয়ে আন্দোলন করছেন, তাঁদের ক্ষোভ আরও বাড়ছে।