কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতার কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের (South Calcutta Law College) ভেতর কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা রাজ্যে। কলেজের গার্ডরুমের ভিতর এক ছাত্রীকে টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে গণধর্ষণ করার অভিযোগে ইতিমধ্যেই তিনজনকে গ্রেফতার করেছে কসবা থানার পুলিশ। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং বাকি দুইজন বর্তমান ছাত্র।
কী ঘটেছিল সেই রাতে?
পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার দিন অর্থাৎ ২৫ জুন সন্ধে সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত চলেছিল নির্যাতন। অভিযোগ অনুসারে, কলেজের গার্ডরুমে টেনে নিয়ে গিয়ে এই ঘটনা ঘটানো হয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, কলেজ (South Calcutta Law College) ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার অভাব এবং কলেজ ইউনিয়ন রুম খোলা থাকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে।
তদন্তে নেমেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
ঘটনার জেরে তৎপর হয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কলেজের উপাধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে লিখিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্ত জানিয়েছেন, কলেজে (South Calcutta Law College) ইউনিয়ন না থাকা সত্ত্বেও কেন ইউনিয়ন রুম খোলা ছিল, তা নিয়ে তদন্ত হবে। পাশাপাশি, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি তদন্তকারী দল কলেজে পরিদর্শনে যাবে বলে জানানো হয়েছে।
জাতীয় মহিলা কমিশনের পদক্ষেপ
এই ঘটনায় জাতীয় মহিলা কমিশনও স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে। কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে তিন দিনের মধ্যে ঘটনার স্ট্যাটাস রিপোর্ট (ATR) দিতে নির্দেশ দিয়েছে তারা। সেই সঙ্গে নির্যাতিতার জন্য মানসিক এবং আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, অভিযোগ দায়েরের পরপরই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুজন অভিযুক্তকে তালবাগান ক্রসিংয়ের কাছে সিদ্ধার্থশঙ্কর শিশু রায় উদ্যানের সামনে থেকে আটক করা হয়। পরে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তৃতীয় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনজন অভিযুক্তের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। নির্যাতিতার পাশাপাশি প্রত্যক্ষদর্শীদেরও শারীরিক পরীক্ষা এবং বয়ান রেকর্ড করেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের ৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আলিপুর আদালত।
কলেজের উপাধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ পাননি। শুধুমাত্র দারোয়ানের কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘‘কলেজে বিকেল ৪টার পর পড়ুয়াদের থাকার অনুমতি নেই। এই ঘটনার সময় এত রাতে ছাত্রছাত্রীরা কীভাবে ক্যাম্পাসে থাকলেন, সেটাই বিস্ময়ের বিষয়।’’
এই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। কলেজে নিরাপত্তার অভাব, ক্যাম্পাস মনিটরিংয়ের দুর্বলতা এবং প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় মহিলা কমিশনের হস্তক্ষেপে তদন্তে গতি আসবে বলে মনে করছেন অনেকেই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট এবং পুলিশি তদন্তের পর কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেদিকেই এখন নজর সকলের।