উৎসবমুখর শহরে যাত্রীদের জন্য নতুন চমক শপিং স্পেশাল বাস

কদিন পরেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো (Durga puja) । সারা রাজ্য জুড়ে এখন শুরু হয়েছে কেনাকাটার হিড়িক। বড় বড় শপিং মল থেকে শুরু করে পাড়ার…

46 Bus Service Halted for Last Three Days, Commuters Face Severe Disruptions"

কদিন পরেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো (Durga puja) । সারা রাজ্য জুড়ে এখন শুরু হয়েছে কেনাকাটার হিড়িক। বড় বড় শপিং মল থেকে শুরু করে পাড়ার দোকান—সব জায়গাতেই ভিড় বাড়ছে প্রতিদিন। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই রাস্তাঘাটে মানুষের চাপ বহুগুণে বেড়ে যায়।

যাত্রীদের এই ভিড় সামলাতে এবং মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে কেনাকাটা সেরে বাড়ি ফিরতে পারেন, সেই কারণেই বিশেষ ব্যবস্থা নিল রাজ্য পরিবহন দফতর। পুজোর পনেরো দিন আগে থেকেই শহরে এবং শহরতলিতে চালানো হবে অতিরিক্ত বাস। এই ঘোষণা করেছেন পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী।

   

মন্ত্রী জানান, প্রতিবছরই দুর্গাপুজোর আগে যাত্রীদের চাহিদা বেড়ে যায়। শপিং করতে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানুষ নেমে পড়েন রাস্তায়। এ সময় স্বাভাবিক সংখ্যক বাস যথেষ্ট হয় না। যাত্রীদের হুড়োহুড়ি, ভিড়, দীর্ঘ অপেক্ষা—সব মিলিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। তাই এবার সময়ের অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে সমস্যার আগেই সমাধান করা যায়। বৈঠকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে, কত সংখ্যক বাস কোথায়, কোন সময়ে চলবে।

শুধু কলকাতাই নয়, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, বর্ধমানসহ একাধিক জেলায়ও এই বাড়তি পরিষেবা দেওয়া হবে। কলকাতা ও তার আশপাশে প্রতিদিন প্রায় ২৫০–৩০০ অতিরিক্ত বাস নামানো হবে। অন্যদিকে জেলা শহরগুলিতেও যাত্রীভিড়ের ওপর নির্ভর করে অতিরিক্ত বাস চালানো হবে। বিশেষত হাওড়া, শিয়ালদহ, এসপ্ল্যানেড, গড়িয়া, দমদম, সল্টলেকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে যাতায়াত আরও সহজ করার চেষ্টা থাকবে।

এছাড়া, পরিবহন দফতর জানিয়েছে, শুধুমাত্র শপিং-এর সময়ই নয়, দুর্গাপুজোর মূল চার দিন অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত রাতভর চলবে বাস পরিষেবা। দর্শনার্থীরা যাতে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরতে গিয়ে সমস্যায় না পড়েন, তাই সারারাতই থাকবে বাস। এই পরিষেবার জন্য আলাদা কর্মী ও চালক নিয়োগ করা হবে অস্থায়ী ভিত্তিতে। মন্ত্রী এও জানিয়েছেন, সকলের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মিলিয়ে চলবে এই ব্যবস্থা। প্রতিটি বাসে নজরদারি বাড়ানো হবে, সিসিটিভি এবং কুইক রেসপন্স টিম প্রস্তুত থাকবে প্রয়োজনে।

স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, “দুর্গাপুজো আমাদের সবার উৎসব। তাই মানুষের যাতায়াতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে দিকেই আমরা নজর দিচ্ছি। অতিরিক্ত বাস নামানোর ফলে ভিড় কিছুটা হলেও কমবে, আর মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে উৎসব উপভোগ করতে পারবেন।”

Advertisements

যাত্রীদের সুবিধার্থে একটি হেল্পলাইন নম্বরও চালু করা হবে। যেকোনও সমস্যা বা তথ্যের জন্য যাত্রীরা সেই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন। পাশাপাশি ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্টের অ্যাপ ও ওয়েবসাইটেও সময়সূচি পাওয়া যাবে।

তবে শুধু শহরে নয়, গ্রামের দিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ, পুজোর সময় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও বহু মানুষ শহরে আসেন কেনাকাটা করতে অথবা মণ্ডপ দর্শনে। তাই গ্রামের রুটগুলোতেও বিশেষ বাস চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, বেসরকারি বাস-মালিকদের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। রাজ্যের পরিবহন দফতর চায়, সরকারি পাশাপাশি বেসরকারি বাসও বাড়তি সংখ্যা চালাক, যাতে সার্বিকভাবে যাত্রীরা উপকৃত হন। এর ফলে ট্র্যাফিক চাপ কিছুটা হলেও ভাগ হয়ে যাবে।

দুর্গাপুজোতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ সবসময়ই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অতিরিক্ত গাড়ি, আলোকসজ্জা, মণ্ডপ দর্শনার্থীর ভিড়—সব মিলিয়ে স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যাহত হয়। তাই বাস চলাচল সঠিক রাখতে কলকাতা পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে আলাদা রুট পরিকল্পনা করা হবে। যেসব এলাকায় প্যান্ডেলের ভিড় বেশি, সেসব জায়গা এড়িয়ে বিকল্প রাস্তা দিয়ে চালানো হবে বাস।

সব মিলিয়ে বলা যায়, এবারের দুর্গাপুজো ঘিরে পরিবহন দফতরের এই উদ্যোগ সাধারণ মানুষের যাতায়াতে অনেকটা স্বস্তি এনে দেবে। কেনাকাটা হোক বা মণ্ডপে ঘোরা—যাত্রীরা নির্বিঘ্নে যাতে উৎসব উপভোগ করতে পারেন, তার সবরকম চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার।