একুশ মানে শুধু অতীত স্মরণ নয়—একুশ মানে প্রতিরোধ, একুশ মানে প্রতিবাদ। (Rachna Banerjee) আর তাই শহীদ দিবসের এই মঞ্চেই বাঙালির আত্মপরিচয়, ভাষা, সংস্কৃতি এবং অধিকারের পক্ষে সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং হুগলির সাংসদ তথা জনপ্রিয় অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকে একযোগে কড়া ভাষায় বিঁধলেন তাঁরা। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হলো—বাংলাভাষী হওয়ার ‘অপরাধে’ কারও সঙ্গে অন্যায় হলে, তার জবাব বাঙালিরা একসঙ্গে দেবে।(Rachna Banerjee)
সোমবার কলকাতার ধর্মতলায় শহীদ স্মরণ সভার জনসভা কার্যত পরিণত হলো এক ভাষা আন্দোলনের মঞ্চে। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে ২১শে জুলাই যতটা রাজনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণ, এবার যেন ততটাই সাংস্কৃতিক এবং আত্মপরিচয়ের লড়াইয়ের মঞ্চ হয়ে উঠল এই দিনটি। বক্তৃতায় উঠে এল বাঙালির প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘উপেক্ষা’, বাঙালি হিন্দুদের ওপরে অন্য রাজ্যে হওয়া ‘আক্রমণ’ এবং মতুয়া ও রাজবংশী সম্প্রদায়ের ‘পুশব্যাক’ প্রসঙ্গও।(Rachna Banerjee)
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “আমরা বাংলা চাই। বাংলা আমাদের গর্ব। বাংলা ভাষা আমাদের আত্মা। যারা এই ভাষাকে অসম্মান করে, তারা এই দেশের সংস্কৃতির শত্রু।” তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “কেন্দ্রীয় শাসক দল মনে করছে বাংলাভাষীরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। আমরা তা হতে দেব না।”
এই সুরে সুর মিলিয়ে বক্তব্য রাখেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “আমাদের ভাষা, আমাদের কৃষ্টি, আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে যাঁরা কটাক্ষ করেন, তাঁদের রাজনৈতিকভাবে জবাব দেওয়া হবে।” পাশাপাশি তিনি বলেন, বাংলার মানুষ যদি জবাব না দেন, তাহলে আগামী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।
তবে এদিন সবচেয়ে চমকপ্রদ এবং আবেগতাড়িত বক্তব্য দেন হুগলির সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাষার প্রতি তাঁর আবেগময় বক্তৃতা মঞ্চে উপস্থিত হাজার হাজার জনতার হাততালিতে ভেসে যায়। তিনি বলেন, “আমি বাংলা ভাষাতেই কথা বলি। আমি বাঙালি, এটাই আমার পরিচয়। মাঝে মাঝে যখন খবর শুনি—কেউ বাংলা বলায় তাকে হেনস্থা করা হচ্ছে, তখন মনে হয়—এও কি সম্ভব? তাই বলছি, আমিও তো বাংলায় কথা বলি, আমাকেও ধরে নিয়ে যান! কিন্তু ভুলে যাবেন না, বাঙালি কিন্তু এর উত্তর দেবেই।”
রচনার এই মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে পড়েছে। অতীতে তাঁর কিছু মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলেও, এদিন তাঁর নির্ভীক বক্তব্য উপস্থিত জনতাকে মুগ্ধ করে। অনেকেই বলছেন, “হুগলির দিদি নম্বর ওয়ান এদিন বাংলার পক্ষের আসল কণ্ঠ হয়ে উঠলেন।”
এই প্রেক্ষাপটে ২১ জুলাইয়ের সভা যেন মনে করিয়ে দিল ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির কথা, যেখানে মাতৃভাষার দাবিতে ঢাকার রাজপথে শহীদ হয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বাররা। এ যেন এক অদ্ভুত সমাপতন—জুলাইয়ের একুশ তারিখেও বাংলার পক্ষে, বাংলার ভাষার পক্ষে উঠল গর্জন।(Rachna Banerjee)
তৃণমূল নেতৃত্বের বার্তা পরিষ্কার—বাংলা ও বাঙালিকে অবজ্ঞা করলে রাজনৈতিক ময়দানে তার কড়া জবাব মিলবে। আর শহীদ স্মরণে এই ভাষাগত লড়াইয়ের ডাক যেন আগামী ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগাম সূচনা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।