তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) (TMCP) প্রতিষ্ঠা দিবস ঘিরে ফের সরগরম কলকাতা। প্রতি বছরই ২৮ অগস্ট দিনটি পালিত হয় ঘটা করে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়, কলেজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দিনটি ছাত্র সংগঠন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে উদ্যাপন করে থাকে। তবে এবার দিনটির গুরুত্ব আরও বেশি। কারণ কলকাতার মূল সভায় সরাসরি উপস্থিত থাকবেন তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কারণে ইতিমধ্যেই তুঙ্গে প্রস্তুতি।
মূল অনুষ্ঠান ও রাজনৈতিক তাৎপর্য
কলকাতার সভাটি হবে ধর্মতলা অঞ্চলে, যেখানে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-যুবক অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে টিএমসিপি-র (TMCP) কর্মী-সমর্থকরা সমবেত হবেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই ভিড় জমবে শহরের কেন্দ্রীয় অংশে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, ছাত্র পরিষদের এই প্রতিষ্ঠা দিবস আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে কার্যত রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চ হতে চলেছে।
যান চলাচলে প্রভাব
এমন একটি বড় রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের কারণে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থায় চাপ তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। বিশেষত ধর্মতলা, রেড রোড, এসপ্ল্যানেড, কলেজ স্ট্রিট এবং শিয়ালদহ রুটে যানজটের আশঙ্কা প্রবল। অফিস সময়ে এই চাপ আরও বাড়তে পারে। নাগরিকদের ভোগান্তি এড়াতে কলকাতা পুলিশ ইতিমধ্যেই বিকল্প রুট পরিকল্পনা করছে বলে জানা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত একাধিক রাস্তায় গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বেগ
এদিকে ওই দিনই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা থাকায় বাড়তি দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা যাতে সময়মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারে, সে বিষয়টি ভেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগেভাগেই পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যেই পুলিশ সদর দফতরে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে অনুরোধ করা হয়েছে, পরীক্ষা চলাকালীন যেন কলেজ স্ট্রিট এবং আশেপাশের এলাকায় যান চলাচল সচল রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য পুলিশের তরফে বাড়তি ফোর্স মোতায়েনের প্রয়োজন।
পুলিশের প্রস্তুতি
কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ইতিমধ্যেই বৈঠক করেছে। সূত্রের খবর, পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে কিছু রুটকে পরীক্ষার সময়সীমায় ছাড় দেওয়া হতে পারে। একইসঙ্গে ভিড় সামলাতে বাড়তি ফোর্স নামানো হবে। সাধারণ নাগরিকদের জন্যও সতর্কবার্তা জারি করা হতে পারে—অফিসযাত্রীদের বাড়তি সময় হাতে নিয়ে বেরোনোর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
প্রতিষ্ঠা দিবসের(TMCP) অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। শাসক দলের তরফে দাবি করা হচ্ছে, ছাত্র সংগঠনের শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে বিরোধীদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হবে। অন্যদিকে বিরোধীদের মতে, এ ধরনের অনুষ্ঠান শহরের জনজীবন ব্যাহত করে এবং ছাত্র রাজনীতিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তা
শহরবাসীর বড় অংশের দুশ্চিন্তা যানজট ও দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব নিয়ে। অনেকের মতে, উৎসব বা রাজনৈতিক কর্মসূচি হোক, সাধারণ নাগরিকদের ভোগান্তি এড়ানো প্রয়োজন। বিশেষত যেদিন পরীক্ষা থাকে, সেদিন যান চলাচল যাতে নির্বিঘ্ন থাকে, তা নিশ্চিত করা পুলিশের দায়িত্ব।